• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জ জেলা আ.লীগের সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা যেমন

মৃণাল সরকার মিলু, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ১৫:২৪, ৭ নভেম্বর ২০২২

সিরাজগঞ্জ জেলা আ.লীগের সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা যেমন

সিরাজগঞ্জ: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে তৎপরতা থাকলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলটির কমিটি গঠনে রয়েছে ধীরগতি। চলমান এই ধারায় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর অবস্থাও একই। দীর্ঘদিন ধরে সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর সম্মেলন না হওয়া আবার অনেক সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদোন্নতি পেয়ে আওয়ামী লীগ-সহ অন্য সংগঠনের চলে যাওয়ায় দীর্ঘ সময়েও পূর্নাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারনে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ছে জেলার রাজনীতি।

দলের সাধারণ কর্মীদের দাবি, সময়মতো সম্মেলন করা হলে দল আরো বেগবান হবে। এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ মে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সহযোগী সংগঠনগুলোকে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

যমুন নদীপাড়ের ও উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার জেলা সিরাজগঞ্জ। যে কারনে ভৌগলিক ভাবে রয়েছে এ জেলার বিশেষ ভূমিকা। ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলা। জাতীয় চার নেতার মধ্যে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও তার ছেলে মরহুম মোহাম্মদ নাসিমের হাত ধরেই এ জেলায় আওয়ামী রাজনীতির বিস্তর ভুমি তৈরি হয়। এ ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত নেতা আব্দুল লতিফ মির্জা, মোতাহার হোসেন তালুকদারের ভুমিকা ছিলো অনন্য।

সিরাজগঞ্জ জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয় ২০১৫ সালে। তিন বছরের কমটি দীর্ঘ ৭ বছর থাকলেও এখনো সম্মেলনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও সম্মেলনের ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সভাপতি নুরুল ইসলাম সজল এরইমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে চলছে কমিটি। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এমন অবস্থার কারনে সিরাজগঞ্জ সদর, পৌরসভা, তাড়াশ, এনায়েতপুর ও বেলকুচি শাখা ঝিমিয়ে পড়েছে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হুদা টিটু বলেন, শাহজাদপুর উপজেলা ব্যতিত সবগুলো কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গেছে। আমরা অতিশীঘ্রই কেন্দ্রিয় কমিটির সাথে আলোচনা করে তাদের নির্দেশনায় সব কয়টি ইউনিট সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করবো এবং জেলা সম্মেলনের নির্দেশনা পেলেই আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করবো।

একই পথে হাটছে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম। সর্বশেষ বার্ষিক সম্মেলন হয় ২০১৯ সালে। বর্তমানে মেয়াদ শেষ করে অতিরিক্ত সময় পার করছে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। নতুন কমিটিতে নেতৃত্বের আশায় এক ডজন প্রার্থী তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। 

বর্তমান জেলা ছাত্রলীগ কমিটি বেশ কয়েটি ইউনিটের সম্মেলন দিলেও সদর উপজেলা প্রায় ১০ বছর ও এনায়েতপুর থানা ছাত্রলীগের কমিটি এক যুগ ধরে বহাল থাকলেও এখনো সম্মেলন দিতে পারেনি। এছাড়া শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হবে এমন আলোচনার ঝড় বইছে তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে।

অন্যদিকে, শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুনাম সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির নীতিনির্ধাকরা। 

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বলেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ৫টি ইউনিয়ন সিরাজগঞ্জ সদর ও ৫টি ইউনিয়ন কাজিপুর নির্বাচনী এলাকায় অন্তভুক্ত হওয়াতে একটু জটিলতা হয়েছে। এছাড়া রায়গঞ্জ সম্মেলন হয়েছে কিন্তু এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। আর কামারখন্দে প্রায় আড়াই বছর আগে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যায় কেন্দ্র থেকে কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও এখনো নতুন করে সম্মেলন করা হয়নি।

জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।

এদিকে এক যুগের অধিক সময় পর ২০১৯ সালে জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে মাধ্যমে রাসেদ ইউসুফ জুয়েল সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য একরামুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় আড়াই বছর পার হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি শীর্ষ এই দুই নেতা। তাই কেন্দ্রে থেকে বিলুপ্তি করে দেওয়া হয় জেলা যুবলীগের কমিটি। 

ইতোমধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সিরাজগঞ্জ যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছেন প্রায় সাত মাস আগে।

এদিকে জেলার সবকয়টি ইউনিট পার করছেন বোনাস টাইম। প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে সম্মেলন হচ্ছে না এনায়েতপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের। যে কারনে একই সাথে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দায়িত্ব দিচ্ছে বেশ কয়টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

সিরাজগঞ্জ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয় ২০১১ সালে। দীর্ঘ ১১ বছর পার করছে এই কমিটির মেয়াদ। এরইমধ্যে কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুবরণ করেছেন। উপজেলা পর্যায়ের সব কয়টি ইউনিটের নতুন করে সম্মেলন হলেও বাদ রয়েছে এনায়েতপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলা।

জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জব্বার খান রতু বলেন, নভেম্বর মাসের শেষের দিকে জেলা কমিটির সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর আগেই বাদ বাকি দুইটি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করা হবে।

এদিকে জেলা কৃষকলীগ অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে।  উপজেলা পর্যায়ে অধিকাংশ ইউনিটের নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। তবে জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সলঙ্গা, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছি। বাকি উপজেলাগুলোতেও পর্যায়ক্রমে সকল কমিটির সম্মেলন করা হবে।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় সিরাজগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হয়েছে। জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি রুমানা রেশমা বলেন, আমি আহ্বায়কের দায়িত্ব থাকাকালীন বেশ কয়েকটি উপজেলার কমিটি করেছি। আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক অতিশীঘ্রই পূর্নাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিবো। 

জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হাসনা হেনা বলেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পূ্র্বে শাহজদাপুর ব্যতিত সবগুলো ইউনিটের সম্মেলন করেছি।

এদিকে দলের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর এমন সাংগঠনিক অবস্থার বিষযয় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনে করার জন্য দলীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন। এই ব্যাপারে আমরা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত ও সমন্বয় করছি। অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা তৃনমূল থেকে জেলা পর্যায়ের সকল ইউনিটিগুলোর সম্মেলন শেষ করবো এবং দলীয় নেতা কর্মীদের শক্তিশালী করে গড়ে তুলবো।

নভেম্বর ৭, ২০২২

মৃণাল সরকার মিলু/এবি/

মন্তব্য করুন: