• ঢাকা

  •  রোববার, নভেম্বর ২, ২০২৫

জেলার খবর

বিদ্যালয়ের শতবর্ষী গাছ ব্যক্তি মালিকানা দেখিয়ে বিক্রির অভিযোগ

মোঃ আরিফুল হক

 প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১ নভেম্বর ২০২৫

বিদ্যালয়ের শতবর্ষী গাছ ব্যক্তি মালিকানা দেখিয়ে বিক্রির অভিযোগ

ছবি- সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় থাকা একটি শতবর্ষী গাছ ছলচাতুরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে গাছটির বেশ কিছু অংশ কেটেও নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আপাতত গাছটি কাটার কাজ বন্ধ রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ৬৭ নং সুন্দাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কোনে রয়েছে শতবর্ষী একটি রেইনট্রি গাছ।

স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট কৌশলে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা চালিয়ে গাছটিকে ব্যক্তিমালিকানা দাবি করে কেটে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই গাছটি স্কুলের আঙিনায় অবস্থান করছে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ছায়া দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় একটি চক্র কৌশলে সার্ভেয়ার রিপোর্টের মাধ্যমে গাছটিকে ব্যক্তিমালিকানা দেখিয়ে নিজেদের নামে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে নেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং এলাকাবাসী গাছটি রক্ষায় সোচ্চার হন। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পর ইউএনওর নির্দেশে গাছ কাটা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। পরে গত ২৫ অক্টোবর পুণরায় গাছ কাটতে গেলে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে গাছকাটা ফের স্থগিত হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণে কাজ করে। ৩০ অক্টোবর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার গিয়ে বিদ্যালয়ের জমির সীমানা পরিমাপ করেন। জরিপে দেখা যায়, শতবর্ষী রেন্ট্রি গাছটির ৮০ শতাংশ অংশই বিদ্যালয়ের জমির ভেতরে অবস্থিত।

এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার উভয়েই মত দেন গাছটি সরকারি জায়গায় পড়ায় এটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবারের সদস্য ও সাবেক শিক্ষার্থী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এই গাছটি স্কুলের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অংশ। একটি সিন্ডিকেট সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি করছি।

গাছ বিক্রেতা কাওসার মিয়া বলেন, এলাকাবাসী সকলেই জানে এটি সরকারি গাছ। ৫ বছর আগে স্কুলের জায়গা মেপে বাউন্ডারি করা হয়। তখন গাছটি বাউন্ডারির বাইরে পড়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে গাছটি বিক্রি করতে বলেন। কিন্তু পুনরায় জায়গা মাপা হলে গাছটি সরকারি জায়গাতে পরেছে। স্যারেরা এসে জায়গা মেপে গেছেন এখন তারাই সিদ্ধান্ত দিবেন।

গাছের ক্রেতা লোকমান হোসেন বলন, আমি আড়াই লাখ টাকায় গাছটি কেনার পর কাটতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়ে কয়েক দফায় গাছ কাটা বন্ধ রাখি। কিছুদিন আগে ইউএনওর কাছে গেলে তিনি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিলে ৮৩ হাজার টাকা স্কুলে জমা দিতে বলেন। আমি ৮৩ হাজার টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দেই। কিন্তু নতুন করে আবার সমস্যা দেখা দেওয়ায় এসিল্যান্ড স্যার রবিবারে উপজেলায় যেতে বলছে। রবিবারে হয়তো এটার একটা সমাধান হবে।

সুন্দাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আরা আকন্দ জানান, স্কুল কমিটি, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে চলাচলের সুবিধার্থে গাছটি সীমানা প্রাচীরের বাইরে রাখা হয়েছিল। মূলত গাছটি স্কুলের জায়গাতেই ছিলো।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, প্রাথমিকভাবে স্কুলের জায়গা পরিমাপ করে দেখা গেছে, গাছটি ১০ ভাগের মধ্যে ৮ ভাগই স্কুলের জায়গার ভেতরে পড়ে। ফলে গাছটি স্কুলের মালিকানাধীন এবং সরকারি সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে মূল সমস্যাটি সৃষ্টি করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি নিজ উদ্যোগে বা কাকে দিয়ে জায়গা পুনঃনির্ধারণ করিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও একবাক্যে জানিয়েছেন, এটি স্কুলের গাছ। আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে গাছটি সত্যিই স্কুলের জায়গার মধ্যেই রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে দু’পক্ষকেই রবিবার উপজেলা কার্যালয়ে এসে ইউএনও ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। ইউএনও ম্যাডাম বিষয়টি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

এসবিডি/ওবায়দুর রহমান

মন্তব্য করুন: