• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

অর্থ ও কৃষি

জীবননগরে বিএডিসি’র ৫ খামারে বছরে তিন কোটি টাকার গোপন কোটেশন!

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ১৭:০৫, ২৪ জুলাই ২০২২

জীবননগরে বিএডিসি’র ৫ খামারে বছরে তিন কোটি টাকার গোপন কোটেশন!

ছবি: সময়বিডি.কম

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দত্তনগর বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) অধীন ৫টি বীজ উৎপাদন খামারে বিভিন্ন খাতে বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার গোপন কোটেশন করা হয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

ওই গোপন কোটেশনের কারণে প্রতিবছরে বিএডিসির প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কোটেশনগুলো ওপেন করে দিলে বিএডিসি প্রতি বছরে প্রায় এই কোটি টাকা লাভবান হবে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার পাথিলা বীজ উৎপাদন খামার ও মহেশপুর উপজেলার গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামার, মথুরা বীজ উৎপাদন খামার, করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামার এবং কুশাডাঙ্গা বীজ উৎপাদন খামারে সার, কীটনাশক, খৈল, পলিথিন, পরিবহন এবং গাড়ি রিপিয়ারিংসহ বিভিন্ন খাতে বছরে তিন কোটি টাকার গোপন কোটেশন করা হয়। প্রতিটি খামারে গোপন কোটেশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ওই খামারের উপ-পরিচালকরা। উপ-পরিচালক তার পছন্দের লোকের কাছ থেকে তিনটি ঠিকাদারের নামের টিন সনদ, ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাটের কাগজ নিয়ে নেন এবং সাদা কোটেশনে ঠিকাদারের স্বাক্ষর করে নেন। পরে উপ-পরিচালকরা অফিস সহকারীর সহায়তায় কোটেশনে নিজেদের ইচ্ছামতো রেট বসিয়ে নেন।

জানা যায়, কোনো ঠিকাদারই জানতে পারেন না তার নামে কোটেশনে কি রেট বসানো হয়। ব্যাংকের চেক নেয়ার সময় এবং বিলের কাগজে স্বাক্ষর করার সময় জানতে পারেন কোটেশনে কি রেট বসানো হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, বাজার মূল্য ছাড়া শতকরা ৪০ ভাগ মূল্য বেশি বসানো হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকের চেক নেয়ার সময় উপ-পরিচালকের কাছে অতিরিক্ত ৪০ ভাগ টাকা দিয়ে দিতে হয়। এছাড়া সার ক্রয়ের জন্য গোপন কোটেশন করা হলেও বাস্তবে কোনো সারই কেনা হয় না। ওই ভুয়া বিলের চেক ব্যাংক থেকে ক্যাশ করে উপ-পরিচালকদেরকে দিয়ে দিতে হয়।

গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কোটেশনে প্রতি কেজি জিংকের দাম ধরা হয়েছিলো ২২০ টাকা করে। গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামারের সাবেক উপ-পরিচালক বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম-পরিচালক দেলোয়ার হোসেন এসিআই লিমিটেডের বিজনেস ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে প্রায় ১০ টন এসিআই জিংক ১২২ টাকা দরে কেনেন। ওই ১০ টন জিংক দত্তনগরের ৫টি খামারে ভাগ করে দেন দেলোয়ার হোসেন। অতিরিক্ত টাকা দেলোয়ার হোসেনসহ চার উপ-পরিচালক ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে ওই এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে।

এছাড়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতি কেজি জিপসাম ৮ টাকায় কিনে ১৪ টাকা, বোরন ১২০ টাকায় কিনে ২২০ টাকা, ভিরতাকো ১৩ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে কোটেশন করা হয়। 

এছাড়া আরো ১৫ প্রকার কোটেশনে প্রায় ৫০ আইটেম বাজার মূল্য ছাড়া ৪০ ভাগ বেশি দরে করা হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোটেশনগুলো ওপেন করে দিলে বিএডিসির ৪০ ভাগ টাকা কম খরচ হবে।

অভিযোগকারীরা জানান, কোটেশন ক্রয় কমিটির সভাপতি দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামারের যুগ্ম-পরিচালক। তিনি ওই কোটেশনের দিকে নজর দিলে কোটেশনগুলো ওপেন হয়ে যাবে এবং বিএডিসি প্রতি বছরে প্রায় এক কোটি টাকা লাভবান হবে।

এ ব্যাপারে দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামারের যুগ্ম-পরিচালক ও কোটেশন ক্রয় কমিটির সভাপতি একেএম কামরুজ্জামান সময়বিডি.কম-কে বলেন, কোটেশনগুলো বাজার রেটের সাথে যাচাই করা হয় না। আমি কোটেশন কমিটির সভাপতি। উপ-পরিচালকরা আমার কাছে কোটেশন সাবমিট করলে আমি হেড অফিসের অনুমোদন দেখে তাতে স্বাক্ষর করে দিই। এবার থেকে বাজার যাচাই করে দেখবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পদক্ষেপ নেবো।

জুলাই ২৪, ২০২২

সালাউদ্দীন কাজল/এবি/

মন্তব্য করুন: