• ঢাকা

  •  শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

অর্থ ও কৃষি

চুয়াডাঙ্গায় সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ শূন্যের কোঠায়

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

চুয়াডাঙ্গায় সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ শূন্যের কোঠায়

ছবি: সময়বিডি.কম

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অধিক আমন ধান আবাদ হয়েছে। এ জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ১১৯ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে গত ১৭ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহের পরিমাণ রয়েছে শূন্যের কোঠায়।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মোট আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৮৭ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬৭ হেক্টর বেশি। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৫১২ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৩ দশমিক ৪৯৯ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। সে মোতাবেক এ জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ১১৯ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রি-ধান ও বিনা-৭ এবং স্বর্ণা জাতের ধান আবাদের জন্য গত ২০২০ সালে ৩ হাজার বিঘা জমিতে ফসল ফলানোর প্রক্রিয়া করে ৩ হাজার কৃষককে বীজ ও সারসহ ২৪ লাখ ৬ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয় সরকার। ২০২১ সালে ২ হাজার বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য ২ হাজার কৃষককে ৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আর ২০২২ সালে ১০ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য ১০ হাজার ৫৫০ কৃষককে ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জেলায় আমনের আবাদ বেড়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নতুন তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক লিটন আলী, হারুন অর রশিদ, পুরাতন তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম ও বাঁকা গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বিনা-৭, ব্রি-৪৯ ও ধানী গোল্ড জাতের ধান ১ হাজার ৩১০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা, স্বর্ণা ও ব্রি-৫১ জাতের ধান ১ হাজার ১৭০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ব্রি-৭১ ও ব্রি-৭৫ জাতের ধান ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এবার বৃষ্টির কারণে ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরে আবহাওয়া স্থিতিশীল হওয়ায় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া পোকা মাকড়ের উপদ্রব ছিল না বললেই চলে। পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থার কারণে এবার আমন ধান উৎপাদন ভালো হবে।

এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ আমন মৌসুমে এ জেলার ৪টি উপজেলায় মোট ২ হাজার ২৫৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সদর উপজেলায় ৩৪১ মেট্রিকটন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৫৮ মেট্রিকটন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৫৯ মেট্রিকটন ও জীবননগর উপজেলায় ৩৯৭ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। 

এই ৪টি উপজেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ৮৩৪ মেট্রিকটন। সদর উপজেলায় ৪৮৩ মেট্রিকটন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬১২ মেট্রিকটন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩২৫ মেট্রিকটন ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। 

প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহ মূল্য ২৮ টাকা ও চালের সংগ্রহ মূল্য ৪২ টাকা। 

২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ধান-চাল সংগ্রহ করা কর্মসূচি ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। তবে গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ শূন্যের কোঠায় রয়েছে। 

সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করার প্রসঙ্গে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক নূরুজ্জামান বলেন, সরকার নির্ধারিত ধানের দাম প্রতি মণ ১ হাজার ১০০ টাকা করেছে। কিন্তু গ্রামের আড়তে প্রতি মণ ধান আমরা বিক্রি করছি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে। এর ফলে আমাদের পরিবহন ব্যয় বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে যাওয়ার সময় পরিবহন ব্যয় হয়। ধান গুদামে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানান সমস্যা দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। অবশেষে গুদামে দায়িত্বরদের উৎকোচ দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়। যা অত্যান্ত দুঃখজনক।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন চালকল মালিক বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের বিস্তর ফারাকের কারণে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ লোকসান করে চাল সরবরাহ করা সম্ভব না। সরকার প্রতি মণ চাল ১ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু খোলা বাজারে প্রতি মণ চাল ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাস পেরিয়ে গেলেও কেন ধান-চাল সংগ্রহ শূন্যের কোঠায় - এ প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সংগ্রহ অভিযান আবারো বাড়ানো হবে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ধান-চাল সংগ্রহ করতে। কিন্তু এখনো সাড়া মেলেনি।

ডিসেম্বর ২৯, ২০২২

সালাউদ্দীন কাজল/এডিবি/

মন্তব্য করুন: