• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

ভিনদেশ

সৌদি আরবে কর্মজীবী নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে বয় কাট হেয়ারস্টাইল

নিউজ ডেস্ক:

 আপডেট: ১১:০৩, ২৬ জুন ২০২২

সৌদি আরবে কর্মজীবী নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে বয় কাট হেয়ারস্টাইল

ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে বর্তমানে কর্মজীবী ​​নারীদের বয় কাট করার রীতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই হেয়ারস্টাইল অল্প সময়ের মধ্যে খুব ট্রেন্ডি হয়ে উঠেছে। কর্মজীবী ​​নারীদের এখন বয় কাট হেয়ারস্টাইল করে রাজধানীর রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়। এই হেয়ারস্টাইল কিশোরীদের মধ্যেও খুব জনপ্রিয়।

মহিলাদের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং আদব-কায়দা নিয়ে এক সময় কঠিন নিয়মের মধ্যে থাকা সৌদি আরবে কখনো কোনো নারী ভাবতে পারেনি যে তারা নিজেদের হিজাব সরিয়ে পছন্দমতো হেয়ারস্টাইল রাখতে পারবেন। কিন্তু সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান প্রাচীনপন্থী এবং গোঁড়ামিকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। যে কারণে এই ঘটনা সম্ভব হয়েছে। মহিলারা এখন ঘর থেকে বেরোতে পারেন এবং কাজ করতে পারছেন। তারা বিনা বোরখা এবং হিজাবে দেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারেন স্বচ্ছন্দে।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বাধ্যতামূলক হিজাব বাতিল করার পর থেকে চুল কাটার বিষয়ে নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। সৌদি আরবে এখন আর নারীদের হিজাব বা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢাকতে হবে না। নিয়মে এই ছাড় ভোগ করছেন এখানকার নারীরা। রাজধানী রিয়াদে নারীদের ছোট চুল নিয়ে রাস্তায় হাঁটা এখন সাধারণ ব্যাপার।

সৌদি আরবের এক নারী চিকিৎসক যখন দেশটির রাজধানী রিয়াদে নতুন চাকরি পেলেন, তখন তিনি নিজের সাদা কুর্তার সঙ্গে এমন হেয়ারস্টাইল রাখা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন, যা কিছু সময় আগে পর্যন্ত ভাবতেও পারেননি সে দেশের মানুষ।

মহিলারা এখন স্বাধীনভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো আচার আচরণ করতে পারছেন। এমনকী তারা ইচ্ছেমতো হলিউড-বলিউড স্টাইলে হেয়ার কাট করতে পারছেন। ওই মহিলা চিকিৎসক, তিনি নিজের লম্বা চুল কেটে যখন নিজের পছন্দের হেয়ার কাট করে সামনে আসেন, তখন সবাই অবাক হয়ে যান।

কয়েক বছরের মধ্যে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে, তিনি মহিলাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সৌদি আরবে এখন নারীদের জন্য বেশ কিছু ছাড় রয়েছে। এখন সে গাড়ি চালাতে পারেন, বাইরে যেতে পারেন এবং বিনোদনমূলক কাজে অংশ নিতে পারেন।

ওই চিকিৎসকের মতো অন্য কোনো কর্মরত মহিলা এই হেয়ার স্টাইল খুব দ্রুত করায়ত্ত করছেন। কারণ কাজকর্মে তাদের সুবিধে হচ্ছে বলে তাদের বক্তব্য। এমনিতেই সৌদি আরবের আবহাওয়া অত্যন্ত গরম। ফলে এই ধরনের ছোট চুল রাখলে কর্মরত নারীদের সুবিধে হয় বলেই তাদের দাবি।

সৌদি আরব উদার হয়ে উঠছে:
মোহাম্মদ বিন সালমানের অধীনে সৌদি আরব আগের চেয়ে অনেক বেশি উদার, বাজারের জন্য উন্মুক্ত এবং নতুন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত বলে মনে হচ্ছে। সারা বিশ্বের ইসলামি দেশগুলোর নেতা হওয়ার পরিবর্তে দেশটি এখন ঘরে বসেই নিজেদের শক্তিশালী করার দিকে নজর দিচ্ছে। মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স নিজের দেশের প্রাচীনপন্থী এবং গোঁড়া ছবি বদলে দেশে বেশি করে বিদেশি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করছেন। তিনি তেলের উপর সৌদি আরবের অর্থব্যবস্থার নির্ভরতা কম করতে চান।

তিনি সৌদি আরবকে ব্যবসার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে প্রমাণ করতে চাইছেন। এই কারণে দেশে খোলা হাওয়া প্রবেশ ঘটানোর জন্য তিনি উদ্যোগী হয়েছেন। তাতে নিজেদের লোকের আচার-আচরণ, স্বাধীন চিন্তা-ভাবনাকে খোলা ছাড় দেয়া হচ্ছে।

নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে:
এখন তারা সৌদি নাগরিকদের সাধারণ মানুষের চেয়ে ধনী করার চেষ্টা করছে। ক্রাউন প্রিন্স জানেন যে নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও কাজের স্বাধীনতা না দিলে এটা সম্ভব নয়। সম্ভবত একটি ফ্যাক্টর কেন তারা এতো খারাপভাবে করছেন। যার কারণে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণও বাড়ছে।

নারীদের কাজের অধিকার দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারেন। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো পুরুষ-মহিলা কর্মীদের নিয়োগ করতে পারেন। 

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া ওই নারী চিকিৎসকের বক্তব্য, নতুন লুক তাকে অত্যন্ত খুশি করেছে। তার নিজের যেমন ভালো লাগছে তেমনি কাজের অসুবিধে হচ্ছে। 

পাশাপাশি তার বক্তব্য, তার এই হেয়ার কাট তাকে আশপাশের পুরুষেদের নজর থেকে বাঁচাচ্ছে। পুরুষরা তার দিকে কম দেখছেন এবং তাতে তার চিকিৎসা করতে সুবিধে হচ্ছে।

তিনি বলেন, লোকে লম্বা চুলওয়ালা নারীদের দেখতে পছন্দ করেন। এই হেয়ার স্টাইল ছেলেদের মতো, যা তাকে কুনজর থেকে বাঁচায় এবং তার কাজের সুবিধা হয়।

রাজধানী রিয়াদে এক সেলুন কর্মী জানিয়েছেন, সৌদি আরবের মহিলাদের মধ্যে বয়েজ কাট হেয়ার স্টাইলের চাহিদা সাম্প্রতিক বেড়ে গেছে। তাদের ৩০ জনের মধ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন মহিলা গ্রাহক এই হেয়ারস্টাইল চাইছেন।

তিনি জানান, এই লুক এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর চাহিদাও বেড়েছে। বিশেষ করে মহিলারা যারা কাজ করতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে চাহিদা বেশি।

তিনি আরো জানান, এই হেয়ারস্টাইল কিশোর এবং ২০-২২ বছরের মেয়েদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। অবিবাহিত মহিলারা এ ধরনের হেয়ার স্টাইল চাইছেন।

জুন ২৬, ২০২২

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: