• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

বেতালা

তুরস্কের এক ‘ধর্মগুরু’র ৮৬৫৮ বছরের জেল, ছিল ১০০০ সঙ্গিনী

অনলাইন ডেস্ক:

 আপডেট: ০৯:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০২২

তুরস্কের এক ‘ধর্মগুরু’র ৮৬৫৮ বছরের জেল, ছিল ১০০০ সঙ্গিনী

সঙ্গিনীদের সঙ্গে আদনান ওক্তার

তুরস্কের স্বঘোষিত ‘ধর্মগুরু’ আদনান ওক্তার-কে (Adnan Oktar) ৮ হাজার ৬৫৮ বছরের সাজা দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। তার ছিল এক হাজার সঙ্গিনী। ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় ৬৯ হাজার গর্ভনিরোধক ওষুধ।

আদনান ওক্তার হলেন তুরস্কের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে এতো বেশি দণ্ড দিলেন আদালত। এর আগে তুরস্কেরই এক ব্যক্তিকে ৯ হাজার ৮০৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

আদনানের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, মহিলাদের যৌনদাসী বানিয়ে রাখার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

আদনান ওক্তারের বয়স ৬৬। তিনি হারুণ ইয়াইয়া নামেও পরিচিত। তুরস্কের এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু ও তার ১৩ সহযোগীকে ইস্তানবুলের ফৌজদারি আদালত এই কারাদণ্ড দিয়েছেন।

ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াশোনার করার পর ধর্মগুরুর পথ বেছে নেন আদনান। ১৯৮০ সালে একজন ধর্মগুরু হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু করেন তিনি। ধর্মগুরু হিসেবে কাজ করতে করতেই আদনানসিলর নামে একটি সংগঠন খোলেন তিনি। পরে ১৯৯০ সালে সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন খুলে মহিলাদের পোশাক নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। মহিলাদের জন্য আধুনিক এবং ছোট পোশাক বানিয়ে ব্যবসায় নামেন।

গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পেয়েছিল যে, সংগঠনের আড়ালে আদনান অসামাজিক কাজকর্মের একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তার পরই ২০১৬ সালে আদনানের বাংলো এবং সংগঠনের দপ্তরে তল্লাশি চালায় তুরস্ক পুলিশ। যদিও সে সময় কিছু পায়নি তারা। কিন্তু থেমে যায়নি প্রশাসন। ২০১৭ সালে ফের তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখন ওক্তার পুলিশের নাগাল থেকে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবালিকাদের যৌন শোষণ, ধর্ষণ, প্রতারণা, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে উস্কানি এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৮ সালে ওক্তারকে গ্রেপ্তার করে তুরস্ক পুলিশ।

এ৯ নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালাতেন ওক্তার। ধর্ম নিয়ে জনপ্রিয় টক শো করতেন সেখানে। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর সেই টিভি চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

অস্ট্রেলিয় সংবাদমাধ্যম টাউন্সভিলে-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংগঠন চালানোর নামে ওক্তার এক হাজার তরুণীকে জোর করে যৌনদাসী বানিয়ে তাদের উপর অত্যাচার চালাতেন।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহিলাদের ত্বকের সমস্যা দূর করার বাহানায় তাদের জোর করে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ানোর অভিযোগ ওঠে ওক্তারের বিরুদ্ধে। তার বাংলোতে তল্লাশি চালানোর সময় ৬৯ হাজারের বেশি গর্ভনিরোধক ওষুধ পেয়েছিল পুলিশ।

ওক্তারের আশপাশে সব সময় সুন্দরী নারীরা ঘিরে থাকতেন। আদালতে ওক্তার স্বীকার করেছিলেন, তার এক হাজার ‘গার্লফ্রেন্ড’ রয়েছে। তাদের তিনি ‘পোষা বিড়াল’ বলে ডাকতেন।

ওক্তারের সংগঠনে এক সদস্য সাক্ষাৎকারে বলেন, কেউ যদি ওক্তারের সংগঠন ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করতেন, তার জীবন নরকে পরিণত করতে দ্বিধাবোধ করতেন না এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু। ওক্তারের রাজনৈতিক প্রভাবও ছিল যথেষ্ট মজবুত। ফলে সংগঠন ছেড়ে পালিয়ে কেউ রেহাই পেতেন না।

ওক্তারের সংগঠনের আরেক কর্মী সিলন ওজগুল সিমসেক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার যখন ১৭ বছর বয়স, ওক্তারের সংগঠনে যোগ দিয়েছিলাম। ২০১৩ সালে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ধরা পড়ে যাই। ওক্তারের সংগঠনে মহিলাদের উপর আমানুষিক নির্যাতন করা হতো।”

অপরাধীদের গ্যাং চালানো, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ধর্ষণ, ব্ল্যাকমেইল এবং শারীরিক অত্যাচার-সহ একাধিক অভিযোগে ২০২১ সালে ১০টি আলাদা মামলায় ওক্তারের এক হাজার ৭৫ বছরের সাজা ঘোষণা করেন আদালত।

অবৈধ ভাবে সংগঠন চালানো, শিক্ষা এবং যৌন অধিকার লঙ্ঘন, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, গুপ্তচরবৃত্তি-সহ নানা অভিযোগে এ বছরের ১৭ নভেম্বর ওক্তারকে ৮ হাজার ৬৫৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন তুরস্কের আদালত।

তুরস্কের আরেক নির্বাসিত ধর্মগুরুকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছিল ওক্তারের বিরুদ্ধে।

নভেম্বর ২৬, ২০২২

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: