মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও ইমনের বেপরোয়া চাঁদাবাজি থামেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কারাবন্দি দুই ভয়ংকর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল এবং সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের এখনও নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ, তিন রাস্তার মোড়, নারায়ণগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড ও সুপার মার্কেট এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
দোর্দন্ড প্রতাপেই তারা নিজেদের অনুসারী সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের দিয়ে এসব এলাকা নিজেদের কব্জায় রেখেছে। এসব এলাকার ফুটপাত, লেগুনা, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে। বেপরোয়া এমন চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীদের। তাদের পকেটেও যাচ্ছে চাঁদার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। এসব তথ্য রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় সাময়িক চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও পুনরায় মাথাচাড়া দিচ্ছে চাঁদাবাজ চক্রটি। এ চক্রের দাপটে রীতিমতো অসহায় স্থানীয় নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও।
জানা যায়, পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম বিএনপি’র কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল এবং ফ্রিডম পার্টির ধানমন্ডি শাখার কো-অর্ডিনেটর শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন যৌথভাবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পরিবহন ও ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। এসব খাত থেকে প্রতি মাসেই তারা বিপুল অংকের অর্থ কামিয়ে নিচ্ছেন। এর মধ্যে সানজিদুল ইসলাম ইমনকে ভারতের জেল থেকে বন্দি চুক্তির বিনিময়ে বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
স্থানীয় সূত্র অভিযোগ করেছে, স্থানীয় বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড় থেকে অটো রিকশা থেকে প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের লোকজন। ফুটপাতের ভ্যানগাড়ি থেকে নেওয়া হচ্ছে নিত্যদিন ২০ হাজার টাকা। আর এ চাঁদাবাজির কাজে জড়িত রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্যের ছেলে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতার শ্যালক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা।
মোহাম্মদপুর হাউজিং, কাটাসুর, জাপান গার্ডেন সিটি, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান নিয়ে গঠিত ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড। ক্যাসিনো ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে এই ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব ওরফে টিজেড রাজিব গ্রেফতার হন।
বর্তমানে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ভোটে জিতে কাউন্সিলর হয়েছেন আসিফ আহমেদ। সবার ধারণা ছিল, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন কাউন্সিলরকে পেয়ে এই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন যাবত ‘জমদূতের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল ও ইমনের অত্যাচার থেকে রেহাই মিলবে।
কিন্তু ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপট কমেনি মোটেও। নানা কায়দা-কৌশলে তারা নিজেদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নজিরবিহীন চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছেন বলেও দাবি করেছে সূত্রটি।
একই সূত্র জানায়, চিহ্নিত চাঁদাবাজ সেই চক্রটির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে বাজার দখলের অভিযোগ রয়েছে। এ দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ওই সময়কার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজীবও আহত হয়েছিলেন। সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল একাধিক গণমাধ্যমে। আবার সিটি করপোরেশনে সড়ক নির্মাণ কাজে বাঁধা দিয়ে ‘বোতলের’ টাকা দাবি করেছিলেন শ্রমিকদের কাছে।
এ নিয়ে মারপিট করেছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকেও। আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগেরই এক নেতা যার বাবা ছিলেন এ ওয়ার্ডেই বিএনপি’র কাউন্সিলর ও সভাপতি। আওয়ামী লীগে তাঁর ছেলে অনুপ্রবেশ করে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন।
সূত্র জানায়, পিচ্চি হেলালের পক্ষে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ হিসেবে পরিচিত লাললা বিহারী, লাফা বিপ্লব ও শাহ আলম লেগুনা, অটো রিকশা থেকে চাঁদা আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দিনের পর দিন তারা নারায়ণগঞ্জ ও বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডে কয়েক লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছেন।
নিজেরা ক্ষমতাসীন দলের ওই এক শ্রেণির নেতাদের চাঁদার ভাগ দিয়ে বড় একটি অংশ পৌঁছে দিচ্ছেন নিজেদের কারাবন্দি গুরু শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলালকে।
একই সূত্র জানিয়েছে, কারাবন্দি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওমন স্থানীয় মেট্টো হাউজিং’র ডিশ ব্যবসা থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করছেন। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলেই তাদেরকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয়রা প্রাণভয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলে না। #
মন্তব্য করুন: