• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

জেলার খবর

চাটমোহরে মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে দূনীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি

পাবনা প্রতিনিধি

 আপডেট: ০৯:৫৬, ৮ জুন ২০২৩

চাটমোহরে মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে দূনীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি

ছবি: সময়বিডি.কম

পাবনা: পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনয়নের চকউথুলী শাহ চেতন (রঃ) দাখিল মাদরাসার সুপার মোঃ হুজ্জাতুল্লাহ’র বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রি-সহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তার এই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ২৩ মে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা সুপার মোঃ হুজ্জাতুল্লাহ-সহ তার সহযোগী দুই-একজন শিক্ষক মিলে একচ্ছত্রভাবে কোন জবাবদিহিতা ছাড়াই মাদরাসার অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে অনিয়ম-দূর্ণীতি করে আসছেন। পরিচালনা কমিটির নির্বাচিত সভাপতি থাকলেও, তাদেরকে কোনো বিষয়ে অবহিত করেন না মাদরাসার সুপার। এমনকি মাসিক সভাও করেন না। মাদরাসার সুপার ও কিছু শিক্ষক নিয়মিত মাদরাসায় না এসেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। ইবতেদায়ি শাখায় কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও, ভুয়া শিক্ষার্থী কাগজে কলমে দেখিয়ে বই উত্তোলন করে সেই বই প্রতিবছর বিক্রি করে টাকা পকেটস্থ করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মাদরাসায় নিরাপত্তা প্রহরী ও কৃষিশিক্ষা পদে নিয়োগ দিয়ে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে নামমাত্র উন্নয়নের নামে খরচ দেখিয়ে সুপার-সহ কয়েকজন শিক্ষক সমস্ত টাকা পকেটস্থ করেছেন। 

মাদরাসা প্রাঙ্গনের বেশকিছু বড় বড় মেহগিনি গাছ বিক্রি করে সমস্ত টাকা সুপার আত্মসাৎ করেছেন। এমন বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দূর্ণীতির বিষয় বুঝতে পেরে মাদরাসার সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম সুপারকে মিটিং ডাকার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও তিনি নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে মিটিং ডাকা থেকে বিরত থাকছেন।

মাদরাসা সুপার পরিচালনা কমিটি মানেন না বলেও বিভিন্ন মহলে বলে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগে রয়েছে।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সময়বিডি.কম-কে বলেন, মাদরাসার সুপার মওলানা মোঃ হুজ্জাতুল্লাহ মাদরাসার বই বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সভাপতি হিসেবে তাকে মানেন না। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী নেই। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিদিন ১৫-২০ জন হাজির থাকেন। সুপারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মাদরাসাটি আজ ধ্বংসের মুখে। শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ সুপারের কারণেই। সুপারের স্ত্রীও এই মাদরাসায় চাকরি করেন। 

মাদরাসার অফিস সহকারী আব্দুল মান্নান বলেন, সুপার নিজের ইচ্ছেমতোই সবকিছু করেন। কাউকে মানেন না। বই বিক্রি করে টাকা পকেটে তুলেছেন। শিক্ষার্থীর তুলানায় প্রতিবছর বেশি বইয়ের চাহিদা দিয়ে, পরে তা বিক্রি করে দেন। 

কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মঞ্জুর রহমান অভিযোগ করেন, সুপার শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করেছেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটছেন। তিনি মাদরাসা সুপারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ এনে গত মাসে থানায় একটি জিডিও করেছেন বলে জানান। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে মাদরাসার সুপার মওলানা মোঃ হুজ্জাতুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনোদিন কখনো বই বিক্রি করিনি। মাদরাসার অফিস সহকারী আব্দুল মান্নান নিয়মিত মাদরাসায় আসেন না। এটা বলার কারণেই আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক মঞ্জুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি তার জানা নেই। তার কাছে কোনো অভিযোগ না করে তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। 

এবতেদায়ি শাখার শিক্ষার্থী কম তা স্বীকার করে হুজ্জাতুল্লাহ জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। মাদরাসায় দেওয়া হয়না, তাই শিক্ষার্থী পাওয়া যায়না। দাখিল শাখায় যথেষ্ট শিক্ষার্থী আছে বলে তার দাবি। আর যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (৫ জুন) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। তাকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জুন ৮, ২০২৩

ইকবাল কবীর রনজু/এবি/

মন্তব্য করুন: