• ঢাকা

  •  বুধবার, মে ৭, ২০২৫

জেলার খবর

বুকটা ধড়ফড় করতাছে, আমার বুকের মানিকদের বুকে ফিরাইয়্যা দেন বাবাজি`

মোঃ আরিফুল হক

 প্রকাশিত: ২১:৫৫, ৬ মে ২০২৫

বুকটা ধড়ফড় করতাছে, আমার বুকের মানিকদের বুকে ফিরাইয়্যা দেন বাবাজি`

ছবি- সংগৃহীত

'বুকের মানিক পোলা(ছেলে)-নাতিরারে আমার বুকে ফিরাইয়্যা(ফিরিয়ে) দেন বাবাজি। আমার পুতাইনরে(ছেলেদের)-নাতিরারে বনবাসে পাঠাইয়্যা দিছে ওরা। বুকটা আমার ধড়ফড় করতাছে বাবাজি,আমার পুতাইন(ছেলেদের)-নাতিরারে বুকে ফিরাইয়্যা দেন বাবাজি।'__আজ সোমবার (৬ মে) বিলাপ করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আমেনা খাতুন(৭০)। আমেনা খাতুনে বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাড়া ডাংড়ী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের স্ত্রী। 

অভিযোগ উঠেছে,বৃদ্ধার ছেলে ও নাতিদের বসতঘরে হামলা-ভাঙচুরের পর  মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জামিনে আসলেও তাদের এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে গত (৩ মে) বৃদ্ধা আমেনা খাতুনের ছেলে মো. মুরশিদুল ইসলাম(৩৮) বাদি হয়ে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুপাটের অভিযোগ এনে ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে আসামি করে থানায় একটি লিখিত দায়ের করেন। এতেও কোন আশার  আলো দেখছে না ভোক্তভোগী পরিবার।

অভিযুক্তরা হলেন- পাড়া ডাংরী গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম ভূ্ঁইয়া (৫০), মোঃ আনিছুল হক ভূঁইয়া (৪৫), মো. লতিফ ভূঁইয়া (৬৫), মো. মাতাব খাঁ (৩৬), মো. সারোয়ার (২৯)সহ আরও এজহারভুক্ত আরও ১০ জন।

জামিনে আসা আনারুল হকের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার(৩০) বলেন,'বাড়িতে থেকে বের হলেই আমার স্বামী ও তার পরিবারের লোকদের লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আমাদের ৪০-৪৫ কাটা বোরোধান জমিতে পেকে আছে। কামলা(শ্রমিক) দিয়ে জমির ধান কাটাতে পাঠালেও তারা বাধা দিচ্ছে। জমির ধানগুলো না কাটলে আমরা সন্তানদের নিয়ে খাব কি? 

আনারুল হক বলেন,'আমি আজ সকালে জামিন পেয়ে লুকিয়ে বাড়িতে এসেছি। আমাদের পক্ষের ৯ জন জামিন পেয়েছে। শুধু লাল মিয়া এখনও জামিন পায়নি। জামিনপ্রাপ্ত ৯ জনের মধ্যে ৭ জন বাড়িতে ঢুকতে পারছে না। বাড়িতে আসলেই তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি এবং আমাদের পক্ষের মুজিবুর বাড়িতে আছি। কিন্তু বের হয়ে কোন কাজকর্ম করতে পারছি না আতঙ্কে। 

ভোক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাড়া ডাংরী গ্রামের মৃত আলী নেওয়াজ খানের পুত্র মো. গোলাপ মিয়ার সঙ্গে একই এলাকার আহাম্মদ আলীর দীর্ঘদিন যাবৎ জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এনিয়ে গত (১ মে) দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এতে আত্মীয়তার সূত্রে 

আহাম্মদ আলীদের রক্ষা করতে বৃদ্ধা আমেনা খাতুনের ছেলে ও নাতিরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষরা। প্রাণ রক্ষায় বৃদ্ধার ছেলে-নাতিরা নিজেদের বসতঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি,প্রতিপক্ষরা দলবল নিয়ে এসে বসতঘরে হামলা চালায়। 

ভোক্তভোগী সোহাগ মিয়া,সাব্বির আহম্মেদ ও শাহজাহান বলেন,হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে  থানা পুলিশকে আমরা কল দেই। 

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আমাদের পরিবারের লোকজনকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের  বসতঘরে অনেক দেশীয় অস্ত্র ফেলে যায়। প্রতিপক্ষের ফেলে যাওয়া দেশীয় অনেক অস্ত্র দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ধারণা আমরাই এ ঘটনার সাথে জড়িত। পরে আমাদের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। এখন জামিনে আসলেও আমরা বাড়িতে ঢুকতে পারছি না। জমিতে ধানসহ অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে,কিন্তু ফসল ঘরে তুলতে পারছি না।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষের আনিছুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,'বিক্ষুব্ধ জনগণ লাল মিয়া ও সোহাগ মিয়াদের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। বাড়িতে ঢুকতে না দেয়া,হত্যার হুমকি ও ধান কাটতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন,' এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত করে  আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন: