• ঢাকা

  •  বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

ফিচার

দেশে দেশে বর্ষবরণের যতো রীতি

অনলাইন ডেস্ক:

 আপডেট: ১৭:৪০, ৩ জানুয়ারি ২০২৩

দেশে দেশে বর্ষবরণের যতো রীতি

বিশ্বজুড়েই বছরের প্রথম দিনটি উদযাপন হয়ে আসছে বিভিন্ন ভাবে। কোথাও জাতিগত নিজস্ব রীতি মেনে আবার কোথাও নিজেদের তৈরি সংস্কৃতিতে। কেউ চান বছরের প্রথম দিনটি কাটুক উল্লাসে আবার কেউ আবার সারাবছর যেন সুন্দর ভাবে কাটে সেজন্য প্রার্থনা করেন।

দেশভেদে পৃথিবীজুড়ে বছরের প্রথম দিনে বিশেষ কিছু সংস্কার পালনের চল রয়েছে। এসব প্রথাগুলোর পেছনে বিজ্ঞানচেতনা, না কি কুসংস্কার, তা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। তবে অদ্ভুত কিছু প্রথা মেনে এ দুনিয়ার বহু মানুষ স্বাগত জানায় নতুন বছরকে। কীভাবে?‌ জেনে নিই-

১) ইতালি:

ইতালির বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রথা রয়েছে। বছরের প্রথম দিন বাড়তি আসবাব ও বাতিল জিনিসপত্র অনেকে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলেন। এই কাজ যারা করেন তাদের বিশ্বাস, এর ফলে নতুন বছরে ইতিবাচক জিনিসপত্র কিংবা ইতিবাচক ভাবনার পরিসর প্রশস্ত হবে বাড়িতে।

২) লাতিন আমেরিকা:

বছরের প্রথম দিন লাতিন আমেরিকার কিছু প্রান্তে অনেকে টেবিলের তলায় বসে এক মিনিটে ১২টি আঙুর খেয়ে থাকেন। তবে একসঙ্গে সব ক’টি আঙুর মুখে ঢোকালে চলবে না। আলাদা আলাদা করে খেতে হবে সেগুলো। যারা এই প্রথা পালন করেন তাদের বিশ্বাস, এতে সুখের হয় নতুন বছর। তাছাড়া সারাবছর যাতে আর্থিক সমৃদ্ধি বজায় থাকে, তার আশায় লাতিন আমেরিকাতেই অনেকে বছরের প্রথম দিন জামা কিংবা প্যান্টের পকেটে একটি বা দুটি মুদ্রা রেখে দেন। কেউ কেউ জুতোর মধ্যেও রাখেন পয়সা।

৩) সুইজারল্যান্ড:

সুইসরা নববর্ষের খাবার বানায়, কিন্তু সেটা খেয়ে দেখেনা। কেকের ক্রিম করে সেটা তারা ফ্লোরে ছড়িয়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মনে করে, এটা করাতে তাঁরা আরো সম্পদশালী হবে।

৪) ব্রাজিল:

নতুন বছরে সিঙ্গেল থেকে ডবল হতে চাইছেন? তার জন্যেও এক বিশেষ প্রথা রয়েছে। অনেকে বছরের প্রথম দিন লাল রঙের অন্তর্বাস পরেন। তারা বিশ্বাস করেন, এতে নতুন বছরে প্রেম আসবে জীবনে। অন্যদিকে জীবনে শান্তি চাইলে সাদা আর সম্পদ চাইলে হলুদ অন্তর্বাস পরিধানের চল রয়েছে ব্রাজিল ও বলিভিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। উল্টো দিকে, বছরের প্রথম দিনই কালো অন্তর্বাস পরলে সারা বছর দুর্ভাগ্য তাড়া করে বলে মনে করেন অনেকে।

তাছাড়া, ব্রাজিলিয়ানদের জন্য দিনটা উদরপূর্তির দিন। মধ্যরাতের আগে তাদের অন্তত সাতটি কিশমিশ খেতে হয়। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদের আশায় রিও ডি জেনিরোর কোপা কাবানা সমুদ্র সৈকতে নৌকায় ফুল ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

৫) মেক্সিকো:

মেক্সিকোয় যারা নতুন বছরে নতুন প্রেম চান তারা ১ জানুয়ারি লাল অন্তর্বাস পরেন। যারা ধনী হতে চান তারা হলুদ অন্তর্বাস পরেন। আর যারা জীবনে শান্তি চান তারা সাদা অন্তর্বাস পরেন।

৬) ইকুয়েডর:

ইকুয়েডরে নববর্ষ উদযাপনে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিশালাকার কাকতাড়ুয়ায় আগুন ধরিয়ে উৎসব করে। একই সঙ্গে খারাপ স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় এমন কোনো পুরোনো ছবিও ওই আগুনে পুড়িয়ে দেন তারা। ঐতিহ্য অনুসারে, বিগত ১২ মাসে ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনা বা স্মৃতি কিংবা দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পেতেই তারা এই অদ্ভুত কর্মকাণ্ড করেন। নতুন বছরে যেন পুরোনো স্মৃতি বয়ে নিয়ে না বেড়াতে হয় এজন্যই ইকুডরে মহা ধুমধামে কাকতাড়ুয়া পুড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।

৭) জাপান:

নববর্ষ উদযাপনে জাপানিজরা রাস্তায় ১০৮ বার ঘণ্টা বাজান। বৌদ্ধ রীতি অনুসারে, ঘণ্টা বজালে মানুষের পাপ দূর হয় ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। একই সঙ্গে বাসিন্দারা এটাও বিশ্বাস করেন, হাসিমুখে বা হাসতে হাসতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোও সৌভাগ্যের বিষয়।

৮) ফিলিপাইন:

ফিলিপাইনরা নতুন বছর উদযাপনে বৃত্তাকার জিনিস দিয়ে নিজেদেরকে ঘিরে রাখেন যাতে আগামি বছর সুখ, সমৃদ্ধি ও সম্পদ আসে সবার ঘরে ঘরে। সেখানে কয়েন থেকে আঙ্গুর পর্যন্ত প্রতিটি জিনিসই সম্পদ ও সাফল্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

৯) আর্জেন্টিনা:

আর্জেন্টাইনরা পুরোনো সব নথি ও কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলার পরে জানালা থেকে এগুলো বাইরে ফেলে দেয়। প্রথা অনুসারে, তারা অতীতকে পেছনে রেখে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে পুরোনো সবকিছু ছিঁড়ে ফেলেন ও জানালার বাইরে ফেলে দেন।

১০) রোমানিয়া:

রোমানিয়াতে কৃষকরা নতুন বছর উদযাপন করেন গবাদিপশুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে। নতুন বছরে যাতে তারা সফলতা ও সৌভাগ্য পান সেই প্রয়াশেই তারা এই প্রাণির সঙ্গে পুরোনো বছরের খারাপ স্মৃতিগুলো শেয়ার করেন।

১১) ডেনমার্ক:

ডেনমার্কের বর্ষশেষের উৎসবের নিয়ম একেবারেই অন্যরকম। যখন সারা বিশ্বের মানুষ নাচ, গানে মেতে ওঠেন সর্বত্র, তখন ডেনমার্কের মানুষেরা কাচের বাসন ভাঙতে ব্যস্ত থাকেন। বছরের শেষদিন সন্ধে থেকেই বাড়ির পুরনো, অব্যবহৃত কাচের বাসন বন্ধুদের বাড়ির সামনে চুপিচুপি ভেঙে আসেন সকলে। যার বাড়ির সামনে যত বেশি কাচের টুকরো জমা থাকবে, সে তত বেশি জনপ্রিয়। এমনটাই ধরে নেন ওখানকার মানুষেরা

১২) অস্ট্রিয়া:

অস্ট্রিয়ানদের নববর্ষ উদযাপন দুই ধাপে হয়। প্রথম ধাপে তাঁরা শুকরের খুলিতে নিজেদের লুকিয়ে থাকা  সৌভাগ্য খুঁজে বেড়ায়। দ্বিতীয় ধাপে তারা আর্থিক সৌভাগ্যের জন্য পেপারমিন্ট আইসক্রিম বানায়।

১৩) সুইজারল্যান্ড:

সুইসরা নববর্ষের খাবার বানায়, কিন্তু সেটা খেয়ে দেখেনা। কেকের ক্রিম করে সেটা তারা ফ্লোরে ছড়িয়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মনে করে, এটা করাতে তারা আরো সম্পদশালী হবে।

১৪) স্পেন:

স্পেনে দ্রুত খাওয়ার প্রতিযোগীতা হয় নববর্ষে। নতুন বছরটা তারা ১২ টি আঙুর খেয়ে শুরু করে। মনে করা হয় এটা না করলে সৌভাগ্য কাছে ঘেষবে না।

১৫) রাশিয়া:

রাশিয়ার বর্ষশেষের উৎসবের রীতি একেবারেই ভিন্ন এবং মজাদার। শেষদিনে একটি কাগজে আগামী বছরের ইচ্ছে বা প্রার্থনা লিখে রাখতে হয়। যে ইচ্ছের কথা কেউ জানবেন না। লেখার পরে সেই কাগজ পুড়িয়ে ফেলতে হয়। পোড়া কাগজের সবটুকু শ্যাম্পেনের গ্লাসে ফেলে রাত ১২টা বাজার আগে খেয়ে ফেলতে হবে। এখনও অনেকেই এই রেওয়াজ মেনে চলেন।

১৬) থাইল্যান্ড:

থ্যাইল্যান্ডে সারাবছরই মজা করতে, ছুটি কাটাতে পর্যটকদের ভিড় জমে। তবে বর্ষশেষের রেওয়াজ আরো মজাদার এখানে। ‘সংক্রান’ নামের রেওয়াজ অনুযায়ী এখানকার মানুষ একে অন্যের গায়ে জল ছুঁড়ে মজা করেন।

১৭) ইংল্যান্ড:

ওয়েলসে প্রত্যের বাড়ির দরজায় দরজায় ঘোরে শিশুরা। হাতে থাকে আপেল। তাতে গেঁথে দেওয়া হয় লবঙ্গ। মনে করা হয়, এই আপেল নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনে।

এছাড়া, ইয়র্কশায়ারে বর্ষশেষের রাতে ঠিক ১২টা বাজার আগে এখানকার বাসিন্দারা বলতে থাকেন, ‘‌কালো খরগোশ, কালো খরগোশ, কালো খরগোশ’। ১২টা বাজলেই বলতে হয় ‘‌সাদা খরগোশ, সাদা খরগোশ, সাদা খরগোশ।’‌ তাহলে নাকি দুর্ভাগ্য বিদায় নেয়।

১৮) স্কটল্যান্ড:

স্কটল্যান্ডের লোকজন ৩১ ডিসেম্বর মশাল জ্বালান। বাজিও পোড়ান। পরের দু’‌দিন ধরে চলে এসব। কবে থেকে এই রীতির শুরু, জানা যায়নি। মনে করা হয়, জলদস্যুরা যখন স্কটল্যান্ডে আক্রমণ করে তখন এই রীতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আগুন জ্বালিয়ে দুষ্ট আত্মাকে দূরে রাখতেন স্কটিশরা।

জানুয়ারি ১, ২০২৩

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: