• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

জীবন-যাপন

সিরাজগঞ্জে যক্ষারোগী বাড়ছে, যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা ব্যহত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২৮ মার্চ ২০২৩

সিরাজগঞ্জে যক্ষারোগী বাড়ছে, যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসা ব্যহত

ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ যক্ষারুগীর সংখ্যা হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরে তুলনায় চলতি বছরই দুই মাসেইএ রুগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হার প্রায় তিনগুন। অপরদিকে এতো রোগী চিকিৎসা দেবার সকল ধরনের যন্ত্রপাতিও আভার রয়েছে। 

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০২২সালে  জেলায় ৬২ হাজার ৫৮৮ জনের কফ ও বুকের এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে পাঁচ হাজার ৩৮৩জন যক্ষা রোগী সনাক্ত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাসেই যক্ষা রোগী সনাক্ত হয়েছেন ৯২৮ জন। আশংকার কথা হলো শিশুরাও যক্ষারোগে আত্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে।

২০২২ সালে জেলায় ২৫২ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুইমাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪২ শিশু।

জেলায় যক্ষার ক্যাচ নোটিফিকেশন রেট (সিএনআর) ১৬৬.৯০। অর্থাৎ প্রতি একলাখ মানুষের মধ্যে  প্রায় ১৬৭ জন যক্ষারোগী রয়েছেন।

কিন্ত যক্ষা চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের যক্ষা সনাক্তের প্রধান ষ্ট্রুল পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে। তাই শিশুদের যক্ষা সনাক্ত অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ছে। বুকের এক্স-রে করার ডিজিটাল মেশিন ও কফ পরীক্ষার জন্য জিনএক্সপার্ট মেশিন জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলাতে নেই। এই রোগের চিকিসার জন্য জেলায় মাইক্রোসকপি মেশিন ১৬টি ও ট্রু-নেট মেশিন রয়েছে মাত্র দুইটি যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। 

এ ছাড়াও হাড়ের মধ্যে যক্ষা পরীক্ষার জন্য এমআরআই, যক্ষা আক্রান্ত স্থানের মাংশ পরীক্ষার জন্য বায়োওপসি ও লাঞ্চে যক্ষা আক্রান্ত রোগীর লাঞ্চের পানি বা রস পরীক্ষার জন্য (এফএনএসি) জেলার সরকারি হাসপাতালে কোনো যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থা নেই। 

এই সকল কারনে ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষা নির্মূলের যে ঘোষণা সরকার দিয়েছেন জেলায় তা বাস্তবায়ন অনেকটা চালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। তাই জেলায় যক্ষা রোগ নির্মূল ও দেশকে যক্ষা নির্মূলের সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডাঃ রামপদ রায় সময়বিডি.কম-কে বলেন, যক্ষা আমাদের বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। জেলায় যক্ষা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম নয়। কিন্ত  যক্ষা আক্রান্ত সব ধরনের রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের নেই। হাড়ের যক্ষা, লাঞ্চের যক্ষা পরীক্ষা ও যক্ষা আক্রান্ত স্থানের মাংশ পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। যার কারনে এই সকল পরীক্ষা করতে রোগীকে ঢাকায় বা বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে ও সময় ক্ষেপন হয়ে সময়মত চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যঘাত ঘটছে। ফলশ্রুতিতে রোগীর মৃত্যুর ঝুকি বাড়াচ্ছে। 

জেলায় যে হারে যক্ষা রোগী বাড়ছে সেই তুলনায় প্রয়োজনীয় যত্রপাতি অনেক কম। জনসাধারণকে এবিষয়ে সচেতন করা এবং আধুনিক সুবিধা সম্বলিত প্রয়োজনীয় যত্রপাতি সরবরাহ না করা হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষা নির্মূলের যে ঘোষনা সরকার দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন অনেকটা চালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. এবিএম ফারহান ইমতিয়াজ বলেন, যক্ষা একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই যক্ষা আক্রান্ত রোগীর পরিবারের সকল সদস্যকেও টিবি প্রভেন্টিভ থেরাপি (টিপিটি) চিকিৎসা দিতে হয়। যক্ষা আক্রান্ত রোগীদেও প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য  চারটি ট্যাবলেটের সমন্বয়ে প্রস্ততকৃত (ফোর-এফ) ট্যবলেট সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সব ধরনের যক্ষা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সঠিক সময়ে অনেকের রোগ সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এর কারনে অনেক সময় রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরী হওয়ায় রোগীর কষ্ট বৃদ্ধি পায়। রোগ মুক্ত হতে সময় লাগে এমনকি মৃত্যুর ঝুকি বৃদ্ধি পায়।

মার্চ ২৮, ২০২৩

মৃণাল সরকার মিলু/এবি/

মন্তব্য করুন: