• ঢাকা

  •  সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫

বাংলাদেশ

সংসদ নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৭ জুন ২০২৫

সংসদ নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। 

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’ 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে। আমি বারবার বলেছি এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেন, ‘এখানে মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।’

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সে বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার- যা কি না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়, সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব। সে বিবেচনায় ও ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি।’ 

নির্বাচন নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় থাকুক। দেড়যুগ পরে দেশে সত্যিকারের একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠিত হবে। বিপুল তরুণ গোষ্ঠী এবার জীবনে প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। এসব লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা জাতির কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা সকল রাজনৈতিক দল এবং আপনাদের এলাকার প্রার্থীদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আদায় করে নেবেন যেন আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যে-সব সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে তা কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই যেন তাঁরা অনুমোদন করেন। আপনারা ওয়াদা আদায় করে নেবেন যে তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে কখনো কোনো প্রকার আপোষ করবেন না এবং দেশের বাইরের কোনো শক্তির কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেবেন না।’

অন্তর্বর্তী সরকার বলেন, ‘আপনারা তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেবেন এই মর্মে যে তাঁরা কখনোই, কোনো অবস্থাতেই আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন না। আপনারা তাদের কাছে অঙ্গীকার আদায় করে নেবেন যে তারা সম্পূর্ণ সততা ও স্বচ্ছতার সাথে দেশ পরিচালনা করবেন এবং সকল প্রকার দুর্নীতি, দলীয়করণ, টেন্ডারবাজি, সিন্ডিকেটবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ইত্যাদি গণবিরোধী কাজ থেকে নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখবেন।’

এই নির্বাচনে পরিচিত দলগুলিই থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, এবারের নির্বাচন শুধু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার বিষয় নয়। এটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা 'নতুন বাংলাদেশ' গড়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনে পরিচিত দলগুলিই থাকবে। তাদের পরিচিত মার্কাগুলিই থাকবে। কিন্তু ভোটারকে বের করে আনতে হবে যে এই মার্কার পেছনে আপনার কাছে ভোটপ্রার্থীরা কে কতটুকু নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রস্তুত। কে কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যারা এই নির্বাচনে ভোটার হবো তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান এবং সৌভাগ্যবতী। আমরা একটা অনন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের সুযোগ ও দায়িত্ব পাচ্ছি। আমরা জাতির নতুন যাত্রাপথ তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব পাচ্ছি। আমরা নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টির মহান সুযোগটা পাচ্ছি। আমাদের সুচিন্তিত ভোটের মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশ নির্মিত হবে। শহীদদের রক্তদান সার্থক হবে। আশা করি, বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেই সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবো এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে ভোট দেবো। এখন থেকে ভাবনা চিন্তা শুরু করুন। আলোচনা শুরু করুন। এখন থেকে আপনাদের ভোটের গুরুত্বটা বুঝে নিন। আপনার এবারের ভোটের গুরুত্ব ঐতিহাসিক মানদণ্ডে দেখা হবে।’

‘পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসররা’ নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নানামুখী অপপ্রচারে লিপ্ত। তারা সবসময় চাইবে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে পরাভূত করতে, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে লাইনচ্যুত করতে এবং বাংলাদেশকে পুনরায় করায়ত্ত করতে।’ 

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আজ আবারও বলছি, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। এখন আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে যেকোনো মূল্যে। পরাজিত শক্তি এবং তাদের সহযোগীরা ওত পেতে বসে আছে আমাদের ছোবল মারার জন্য, আমাদের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেয়ার জন্য। আমরা তাদের কিছুতেই এই সুযোগ দেব না। আসুন, আমরা আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদার বিরুদ্ধে যেকোনো আঘাত প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে প্রতিরোধের ঐক্যবদ্ধ সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে তুলি।’

এসবিডি/এবি

মন্তব্য করুন: