• ঢাকা

  •  শুক্রবার, জুন ২০, ২০২৫

ফিচার

বোকাইনগরের নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার ও একজন সুফি সাধক

রায়হান উদ্দিন সরকার

 প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ১৪ এপ্রিল ২০২১

বোকাইনগরের নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার ও একজন সুফি সাধক

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নে হযরত শাহজালাল (রা.) মাজারের সমসাময়িক হিসেব অনুযায়ী সাতশ' বছর ধরে হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রা.) এর মাজারটি প্রতিষ্ঠিত। নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজারটি গৌরীপুর উপজেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এই মাজার থেকে ঠিক তিনশ ফুট পশ্চিমে রয়েছে বেশ পুরনো একটি শাহী মসজিদ। পাঠান বা মুঘল আমলের গঠন শৈলিতে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে সুফি, সাধক, পীর, আউলিয়াদের মাধ্যমেই ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছে।

জানা যায়, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রা.) মোমেনসিং পরগণার বোকাইনগরে এসেছিলেন ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে। বর্তমান এই মাজারের নামে ইংরেজ কর্তৃক পীরপাল দানের কতটুকু জমি দেওয়া হয়েছিল তা জানা যায়নি। ঐতিহাসিক মাজারগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি থাকে। জানা গেছে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্য সুলতানী আমল থেকেই সরকারিভাবে নানা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা বা ভূমিদান করা হতো খরচ নির্বাহের জন্য। একে বলা হতো পীরপাল লাখেরাজ। সাত-আটশ' বছর আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় কোন নিজামুদ্দীন আউলিয়া এসেছিলেন, এর সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে একই নামে দুই স্থানে মাজারের অবস্থান থেকে। বাংলাদেশের বোকাইনগরে নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার এবং দিল্লিতে নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজার নিয়ে। 

দিল্লির শেখ খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ নিজামুদ্দীন আউলিয়া হলেন ভারতীয় উপমহাদেশে চিশতিয়া তরিকার একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক। তিনি নিজামুদ্দীন আউলিয়া নামেই বহুল পরিচিত। ভারতে চিশতিয়া তরিকার অন্যতম মহান সুফি সাধকদের মধ্যে তিনি একজন। তার গুরু ফরিদউদ্দীন গঞ্জেশকর। যার মূল কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকি হয়ে খাজা মঈনউদ্দীন চিশতির সঙ্গে মিলিত হয়। এই অনুযায়ী তারা চিশতিয়া তরিকার মৌলিক আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা বা সিলসিলা তৈরি করেছেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) ইয়ামেন থেকে প্রথমে হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রহ.) দরগায় সাক্ষাতের জন্য এসেছিলেন। দিল্লিতে হজরত শাহাজালাল (র.)-এর আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হজরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (র.) তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ তিনি তাঁকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও এর আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবং ‘জালালী কবুতর’ নামে খ্যাত। 

ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দিল্লির শেখ খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ নিজামুদ্দীন আউলিয়া কখনও বাংলায় আসেননি।

বর্তমান সময়ের একজন পীর সাহেব বলেন, 'বিষয়টা হচ্ছে - সে সময় ইসলাম প্রচারে বিভিন্ন দেশের ইসলামের কাণ্ডারীরা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। তাই যিনি যেখানে যেখানে ঘুরে বেরিয়েছেন, ভক্তরা ঠিক সেখানে তাঁকে স্মরণ করতে কিংবা তার অনুসারী হয়ে ইসলাম প্রচারে স্ব স্ব স্থানেই মাজার তৈরি করেছিলেন। এটা সম্পূর্ণ মনের বা আত্মার ব্যাপার, আত্মসুদ্ধিতে এমনটি হয়।' 

বোকাইনগর এলাকার মানুষ জানাচ্ছে, জনশ্রুতিতে সুসং ও মোমেনসিং পরগণা হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পরিচিত মধ্যযুগের সেই ভয়ানক ডাকাত নিজামুদ্দীন খুন ও দস্যুবৃত্তি পরিহার করে শেখ ফরিদের কাছে তিনি শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রহ.) ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য বোকাইনগরে এসেছিলেন। এখানে নিজামুদ্দীন দরগা গড়ে উঠেছে তার সমাধিস্থলকে ঘিরেই।

ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশন এবং দি ইলেক্টোরাল কমিটি ফর পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স এর যৌথ উদ্যোগে আড়াইশ’ বছর আগে ব্রিটিশ ভূ-বিদ জেমস রেনেলের মানচিত্র সংগ্রহের মাধ্যমে মোমেনসিং পরগণার প্রাচীন নিদর্শন খোঁজার জন্য ২০২০ হতে জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। জরিপকালীন গৌরীপুর শহর থেকে ৪/৫ খানেক কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বোকাইনগরে নিদর্শন খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করা হয় ৮টি প্রাচীন নিদর্শন। ৮টি প্রাচীন নিদর্শনগুলো হচ্ছে- (১) হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রা.) এর মাজার (২) কেল্লা বোকাইনগর মাটির প্রাচীর (৩) বোকাইনগর শাহী মসজিদ (৪) প্রাচীন মঠ (৫) কালীবাড়ি মন্দির (৬) গোসাইবাড়ি মন্দির (৭) বাসাবাড়ি জমিদার বাড়ি (৮) মধ্যযুগের বেশ কয়েকটি মাজার।

তখন হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রা.) এর মাজার নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। প্রত্নসমৃদ্ধ গৌরীপুর অঞ্চলের হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রা.) এর মাজারের কোন ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল নেই বা পাওয়া যায়নি। তা গবেষণা, জরিপ, জনশ্রুতি ও কিংবদন্তির উপর ভিত্তিকরে কিছু ইতিহাস তুলে ধরা হলো।

‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাম্মণ জমিদার’ বইয়ের লেখক শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী (রামগোপালপুরের জমিদার) শতবছর আগে বোকাইনগর নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রা.) এর দরগা সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। বাংলা ১৩১৫ সালে কলকাতায় জাহ্নবী ম্যাগাজিনে শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর একটি লেখা ‘বোকাইনগরের  ইতিবৃত্ত’ প্রকাশিত হয়েছিলো। এ দুর্লভ লেখাটি কলকাতা থেকে সংগৃহ করে বর্তমান প্রজন্মকে জানানোর জন্য পুনরায় ‘পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স-২০২০’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। পাঁচ বছর পর অর্থাৎ বাংলা ১৩২০ সালে সৌরভ ম্যাগাজিনে শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর আরও একটি লেখা শুধু মাজারের শিরোনামে ’নিজামুদ্দীন আউলিয়ার দরগা’ প্রকাশিত হয়েছিলো। এ দুর্লভ লেখাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং লেখাটি পুনরায় ’পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স -২০২১’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এই দুটি দুর্লভ লেখা সংগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রথম ও প্রধান ব্যক্তি হলেন বীরাঙ্গনা সখিনা সিলভার পেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ প্রাপ্ত ও নেত্রকোণার ইতিহাস-ঐতিহ্যের লেখক জনাব আলী আহাম্মদ খান আইয়োব। 

জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘বোকাইনগরের  ইতিবৃত্ত’ লেখাটিতে দেখা যায় যে, ‘‘এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারার্থে দিল্লি থেকে নিজামুদ্দিন আউলিয়া নামক একজন সিদ্ধ দরবেশ আগমণ করিয়াছিলেন। তাঁহার কার্যে সহায়তা করিবার নিমিত্ত আরও সাতজন দরবেশকে তিনি সঙ্গে আনয়ন করেন। তাঁরাই এদেশের নিম্নশ্রেণিস্থ হিন্দু ও কোচ গারো প্রভৃতি সম্প্রদায়কে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। উক্ত মহাপুরুষ দুর্গের ভেতরই দেহত্যাগ করেছিলেন। তাঁহার সমাধিক্ষেত্র এ অঞ্চলে একটি পবিত্র স্থান বলিয়া পরিগণিত। কবরটি বহু পুরাতন বলিয়াই মনে হয়; কিন্তু উহার উপরে কোনও খোদিত লিপি দৃষ্ট হয় না। সমাধিটি নষ্ট হইয়া যাইবার উপক্রম হওয়ায় সাধারণের উদ্যোগে ইহার পুনঃসংস্কার সাধিত হইয়াছে। কিছু লেখা থাকিলেও সে সময়ে উহা লুপ্ত হওয়া সম্ভব। সমাধিটি প্রাচীর বেষ্টিত, প্রাচীন প্রাচীরের কতকাংশ ও আলো দিবার প্রাচীন স্তম্ভটি অদ্যাপি বিদ্যমান আছে। ওই স্থানে প্রতি শুক্রবারে বহুলোক সমবেত হইয়া উপাসনা করিয়া থাকে। সমাধির দক্ষিণভাগে একটি বড়ো প্রাচীন কূপ আছে, উহার জল এখনও পানার্থে ব্যবহৃত হয়। বট প্রভৃতি কতকগুলি বহু প্রাচীন বৃক্ষ স্থানটিকে ছায়া সুশীতল ও মনোরম করিয়া অতীত ঘটনাবলীর সাক্ষীরূপে দণ্ডায়মান আছে। দরগার সম্মুখস্থ ভূমিতে প্রতি বৎসর বৈশাখ মাসের প্রত্যেক বৃহস্পতি ও রবিবারে একটি করিয়া মেলা হয়। এই সময়ে বহুদূর হইতেও অনেক যাত্রী উপস্থিত হইয়া থাকে। কেল্লার ভিতর দিয়া যে নদী প্রবাহিত হইত, তাহার উপরিস্থ একটি সেতুর ভগ্নাবশেষ এখনও বিদ্যমান রহিয়াছে। যে স্থানে উহা অবস্থিত সে স্থানে নদী এখন শুষ্ক হইয়া গিয়াছে। সেতুটি প্রাচীন বলিয়াই বোধ হয়।’’

আবার শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘নিজামুদ্দীন আউলিয়ার দরগা’ লেখাটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূণতথ্য দেখা যায় যে, ‘‘বোকাইনগর দুর্গে নিজামুদ্দীন আউলিয়া নামক এক সিদ্ধ পুরুষের সমাধি অবস্থিত। কোন সময়ে ইহা নির্মিত হয় তাহা নিরূপণ করা কঠিন। স্থানীয় লোক মুখে শ্রুত হওয়া যায় যে, এই স্থানে সিদ্ধ পুরুষ নিজামুদ্দীন আউলিয়া আগমণ করিলে তাহার স্মৃতি রক্ষার্থে একটা আস্তান (আশ্রম) স্থাপিত হয়। উহাই দরগা নামে পরিচিত। নিজামুদ্দীন আউলিয়া আপন কার্যান্তে দিল্লী অঞ্চলে গমন করেন এবং সেখানেই সমাধিস্থ হন। তিনি ধর্ম্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেই এতদ্দেশে আগমণ করেন। যে কবরটা দেখিতে পাই তাহাতে নিজামুদ্দীন আউলিয়ার দেহ রক্ষিত নাই বলিয়া প্রকাশ। কেবল তাঁহার স্মৃতি রক্ষার্থে ইটাকারে গঠিত হইয়াছিল। তিনি বহু কোচ মেচ জাতিকে ইসলাম ধর্ম্মে দীক্ষিত করেন। পূর্বে পরগণা ময়মনসিংহ প্রভৃতি স্থানে কোচ মেচ জাতির বসবাস অধিক ছিল। এমন কি বোকাইনগরেও একটা শক্তিশালী কোচ রাজা বাস করিতেন! কালক্রমে কোচদিগের রাজত্বের অবসান হইলে ক্রমে মোগল আধিপত্য স্থাপিত হয়। এখনও কোচদিগের বৃহৎ দীর্ঘিকাগুলি অতীত যুগের সাক্ষ্য দিতেছে। নিজামুদ্দীন আউলিয়ার এই সমস্ত অসভ্য জাতিকে ইসলাম ধর্ম্মে দীক্ষিত করতঃ নূতন সভ্যতালোকে আনয়ন করা অসম্ভব নহে। এই মহাপুরুষ কোন সময়উদ্ভূত হইয়াছিলেন তাহা আলোচনা করা কর্তব্য।’’

লেখকের বর্ণনায় আরও কিছু তথ্য দেখা যায়, ‘‘দিল্লি নগর হইতে ৮ মাইল পশ্চিমে নিজামাবাদ নামক স্থানে আর এক নিজামুদ্দীন আউলিয়ার কবর দৃষ্ট হয়। এই কবরের উপর পারস্য ভাষায় খোদিত ১৫৬১ খৃষ্টাব্দের শিলালিপি দেখা যায়। এইরূপ এবাদ যে, ঐ নিজামুদ্দীন হইতেই এই নগরের নাম ‘নিজামাবাদ’ হইয়াছে। এই ব্যক্তিই সেই লোক আছিল, কিনা কে বলিতে পারে? ইতিহাস আলোচনায় দেখা যায়, খৃষ্টীয় ষোড়শশতাব্দীর শেষ কি মধ্যবর্তী সময়ে ৩৬০ জন আউলিয়া (সাধু) পদ্মা নদী পার হইয়া পূর্ব্ববঙ্গের দিকে আগমণ করেন। শ্রীহট্ট পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানের প্রায় পরগণায়ই এক একজন আউলিয়ার সমাধি দেখা যায়। ইহারা ইসলাম ধর্ম্ম প্রচারার্থেই এতদঞ্চলে আগমণ করেন। পূর্ব্বোক্ত নিজামুদ্দীন আউলিয়ার সহিত শেষোক্ত নিজামুদ্দীনের অনেকদিনের পার্থক্য হইয়া পড়ে। এক্ষণে কোন ব্যক্তি বোকাইনগরে আসেন তাহা অনুমানের উপর স্থির করা কঠিন। অধিবাসিগণের নিকট হইতে এই সম্বন্ধে কোন স্পষ্ট (সন্তোষজনক) বিবরণ পাওয়া যায় না। আমরা বোকাইনগরের সন্নিকটে একটি নিজামাবাদ গ্রামও দেখিতে পাই। ইহা হইতে স্পষ্ট, শেষোক্ত ব্যক্তিকে অনুমান করা যায়।’’

এখানে লেখক আরও সমাধির তথ্যের সন্ধান দিয়েছেন যে, লেখকের বর্ণনায় ‘‘বোকাইনগরের সমাধিক্ষেত্র এ অঞ্চলের একটি পবিত্র স্থান বলিয়া খ্যাত। কালের আবর্তে সমাধিটি নষ্ট হইয়া যাইবার উপক্রম হওয়ায় ইহার পুনঃসংস্কার হইয়াছে। প্রাচীন প্রাচীরের কতকাংশও আলো দিবার প্রাচীন পাকা শুটা বিদ্যমান আছে। প্রতিদিন দরগার জন্য নিযুক্ত ফকির সন্ধ্যার সময়আলো দিয়া থাকে। বেষ্টিত প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ১৫ হাত এবং প্রস্ত ১০ হাত। এই দরগাটিকে যে কেবল মুসলমানগণ সম্মান করিয়া থাকেন এমন নহে, হিন্দু-মুসলমান সকলেই সম্মান কুর্নিশ করিয়া থাকেন।’’

বর্তমান সময়ের এলাকাবাসী জানাচ্ছে যে, মধ্যযুগের সেই ভয়ানক ডাকাত নিজাম উদ্দিন খুন-ডাকাতি পরিহার করে আউলিয়া হয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য বোকাইনগরে এসেছিলেন; কিন্তু রামগোপালপুরের জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী শতবছর আগে যে তথ্যের সন্ধান দিয়েছেন, তার দু’টি ঐতিহাসিক প্রবন্ধে নিজাম ডাকাতের কোনো কথা উল্লেখ করেননি।

এবার নিজাম ডাকাত প্রসঙ্গে আসা যাক, ৭০ এবং ৮০-এর দশকে প্রাইমারি স্কুলের চয়নিকা নামে একটি পাঠ্য বইয়ে চিত্রসহ নিজাম ডাকাত প্রসঙ্গে একটি গল্প ছিল। গল্পটি সেই সময়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল। বর্তমান সারা বাংলায় জনশ্রুতিতে নিজাম ডাকাতের গল্পটি বিদ্যমান। তাছাডা পূর্ববঙ্গ গীতিকায় ’নিজাম ডাকাইতের পালা’ রয়েছে। 

’নিজাম ডাকাইতের পালা’ সংগ্রহের ইতিহাস থেকে জানা যায়, পালা সংগ্রাহক শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান হতে এ পালাটি সংগ্রহ করেন। এই পালার অধিকাংশ আশুতোষ বাবু চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার অন্তর্গত আল্লাগ্রাম নিবাসী সদর আলী গায়েনের নিকট হইতে সংগ্রহ করেন এবং মতিয়ার রহমান নামক একজন বাজিকরের নিকট হইতে অবশিষ্টাংশের উদ্ধার করেন। পালাটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্র প্রচলিত। পালা রচয়িতার নাম জানা যায় নাই। 

নিজাম ডাকাত চতুর্দ্দশ শতাব্দীর লোক। নিজাম ডাকাত যখন শেখ ফরিদকে আক্রমণ করেছিল তখন শেখ ফরিদ তাকে বলেছিলেন, তুমি যে ডাকাতি করো তোমার পরিবার আর আত্মীয়দেরকে নিয়ে খাওয়াও তারা কি তোমার পাপের অংশীদার হবে? পালা গানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেখ ফরিদ নামে আছিল ফকির একজন...এককম একশত মানুষ কাইট্যে সে ডাকাইত।।... নেজাম কহিল - ‘‘বুড়া শুন দিয়া মন। টাকা যদি নাহি দেয় লইব গর্দ্দন।।” 

এখানে ইতিহাস কিছুটা নিশ্চুপ, দিল্লির শেখ খাজা সৈয়দ  মোহাম্মদ নিজামুদ্দীন আউলিয়া গুরু ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকর এবং চট্টগ্রামে ডাকাত নিজামুদ্দিন আউলিয়া গুরু শেখ ফরিদ প্রায় একই নাম। ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকর এবং শেখ ফরিদ একই ব্যক্তি কি-না তো অনেকে মতামত ব্যক্ত করেছেন। হযরত শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর শরীয়ত, তরিকত, হাকিকত এবং মারেফত বিদ্যায় শিক্ষা লাভ করেন। তিনি হযরত ওমর ফারুক (রা) এর বংশধর ছিলেন। হযরত শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর (রহ) মায়ের আদেশে দীর্ঘ ৩৬ বছর যাবৎ কঠোর সাধনায় মগ্ন ছিলেন। এই দীর্ঘ ৩৬ বছর দুনিয়ার কোনো কিছুর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল না। 

ফরিদ উদ্দিন গঞ্জেশকরের মাজার পাকিস্তানে। সেখানে বাবা ফরিদ অথবা বাবা গঞ্জেশকর নামে পরিচিত। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীকে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের স্বর্ণযুগ বলা যায়। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীতে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকায় শাসকশ্রেণীর সঙ্গে বহু পীর-দরবেশ এ দেশে আগমণ করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। ইসলামের শরিয়ত ও মারফত উভয় ধারার প্রচার ও প্রসার তীব্রতর হয়। 

মুসলিম বিজয়োত্তর যেসব সুফি-সাধক ইসলাম ও তরিকা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শেখ ফরিদ উদ্দিন (রহ.) বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও ফরিদপুর জেলায় ইসলাম প্রচার করেন। তিনি চট্টগ্রামে শেখ ফরিদ উদ্দিন চশমা এবং ফরিদপুওে শেখ ফরিদ নামে সুপরিচিত। 

তাছাড়া অনুসন্ধনে দেখা যায়, শেখ ফরিদ নামে আরও কিছু জায়গায় পাওয়া গিয়েছে। পাবনা জেলা সদর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ফরিদপুর উপজেলা। ফরিদপুর উপজেলা নামকরণের বিষয়ে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে, বহু বছর আগে সুফি সাধক শেখ শাহ ফরিদ (র.) এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন এবং এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করেন। এখানে তাঁর মাজার রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস, সুফি সাধক শেখ শাহ ফরিদ (র.) এর নামানুসারে এ উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে ‘‘ফরিদপুর’’। 

আরও কিছু তথ্যে দেখা যায়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন চর ফরিদপুর দরগাবাড়ী জামে মসজিদ ও পাশে একটি আধ্যাত্মিক ঘর।চর ফরিদপুর ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক গ্রাম। শম্ভুগঞ্জ মোড় হতে নেত্রকোনা যাওয়ার পথে গাছতলা বাজার ও কাশীগঞ্জ বাজার মধ্যস্থলে অবস্থিত। গৌরীপুর উপজেলার পাশেই রয়েছে প্রতিবেশী উপজেলা তারাকান্দা। গৌরীপুর উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। একসময় গ্রামটি ব্রহ্মপুত্রের নদের একটি চরের উপর অবস্থিত ছিল। 

ইতিহাস অনুসন্ধান করলে জানা যায়, হাজার বছর আগে ইসলাম প্রচার করার জন্য ফরিদ আহমেদ (রহ.) নামে কোনো এক সাহাবা এসেছিলেন, আবার কারও মতে, প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর (রহ.) এই নদীর চরে এসেছিলেন যার নামকরণ করা হয় চর ফরিদপুর। 

ময়মনসিংহ অঞ্চলের কামরূপ শাসনের অবসান হলে মুসলিম সুলতানরা রাজ্য শাসন করেন। জরিপকালীন এক বয়স্ক প্রতিবেশী মো. ইদ্রিস আলী মাস্টার (৯২) বলেছিলেন, দরগাটি গায়েবী। ইসলাম প্রচার করার জন্য ফরিদ আহমেদ (রহ.) নামে কোনো এক সাহাবা এখানে এসেছিলেন। দরগাটির ভিতর তিনি সারাক্ষণ নামাজ-প্রার্থনা করতেন। দরগাটির সাথে একটা ছোট মসজিদ ছিল। প্রতি শুক্রবারে সাত গ্রামের সাতজন অলিদেরকে নিয়ে তিনি নামাজ পড়তেন ও আলোচনা করতেন। 

তিনি বলেন, বাবা-চাচার কাছ থেকে শুনেছেন, দরগাটি ইমাম হোসেনের স্মৃতিসৌধ কাঠামো। তিনি দেখেছেন, ৮০ বছর আগে ১০ মহররমে দরগাটির সামনে জারি গান হতো এবং কান্নাকাটি হতো। মানত বিষয়ে আরও বলেন, প্রতি শুক্রবারে কম-বেশি মান্নতের টাকা আসে। পবিত্র মনে কেউ মান্নত করলে খালি হাতে ফিরে যায় না। তবে ধারণা করা হয়, বহু বছর আগে শেখ  ফরিদ (র.) নামে কোনো সুফি সাধক বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভ্রমণে আসেন। ময়মনসিংহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য পীর ফকির দরবেশদের দরগাহ, মাজার অথবা তাঁদের স্মৃতি বিজড়িত মসজিদ বিদ্যমান।

বোকাইনগর প্রসঙ্গে বিভিন্ন ভক্তের সমাগম থেকে জানা যায়, এক সময়ে বোকাইনগরের সাধারণ মুসলমানদের মনের দখল নিয়েছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়া। এ বিষয়ে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, শাহজালাল (রহ.) ও তার সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়া এবং সফরসঙ্গীতে একই নামে তিনজন নিজামুদ্দীন আউলিয়া রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করার ক্ষেত্রে যাঁদের নাম সবচেয়ে উজ্জ্বল তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) তাঁদের অন্যতম।

৩৬০ জন আউলিয়ার তালিকায় তিনজন নিজামুদ্দীন আউলিয়ার নাম দেখা যায়। (১) হযরত শায়খ নিজাম উদ্দিন ওসমানী (র.), (২) হযরত মখদুম নিজাম উদ্দিন (রহ.) ও (৩) হযরত নিজাম উদ্দিন কিরমানী (রহ.)। তন্মধ্যে হযরত শায়খ নিজাম উদ্দিন ওসমানী (র.) এর মাজার সিলেট শহরে রয়েছে। বাকি দু'জন নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

বোকাইনগর ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। এ অঞ্চল ছিল পাঠান রণনায়ক খাজা উসমানের শেষ ঘাঁটি। ইতিহাসখ্যাত খাজা উসমান খাঁর দুর্গ ও নিজামুদ্দীন মাজারের জন্য এ স্থান সমধিক পরিচিতি ও গুরুত্ব লাভ করেছে। নিজামুদ্দীন মাজারে যিনি শায়িত আছেন তাঁকে দিল্লি থেকে আগত নিজামুদ্দীন আউলিয়া অথবা চট্টগ্রাম থেকে আগত নিজামুদ্দীন ডাকাত অথবা সিলেট থেকে আগত ৩৬০ জন আউলিয়ার মধ্যে একজন অথবা মধ্যযুগের নিজামুদ্দীন আউলিয়া নামে কোনো সুফি সাধককে বলে মনে করা হয়। মাজার প্রতিষ্ঠার গোড়া থেকেই এ জনশ্রুতি চলে আসছে। তবে এই মাজার যখন যেভাবেই নির্মিত হোক না কেনো এ অঞ্চলে একজন ধর্মপ্রচারকের আগমণ ঘটেছিল এটা সত্য। 

বীরাঙ্গনা সখিনা সিলভার পেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ প্রাপ্ত ও ‘‘গৌরীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কিংবদন্তী ’’বইয়ের লেখক প্রফেসর কাজী এম. এ  মোনায়েম এ দরগা সমন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন। কেল্লা বোকাইনগর গ্রামে নিজামউদ্দীন আউলিয়ার আগমণ ঘটে খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতকের গোড়ার দিকে। কথিত আছে, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়ার নেতৃত্বে একচল্লিশজন আউলিয়ার একটি দল ইসলাম ধর্ম প্রচারের মানসে এই বোকাইনগর গ্রামে আগমণ করেছিলেন।

আবার শতবছর আগে শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘বোকাইনগরের  ইতিবৃত্ত’ লেখাটিতে যে তথ্য দিয়েছেন যে, এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারার্থে দিল্লী হইতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া নামক একজন সিদ্ধ দরবেশ আগমণ করেন। তাঁর কার্যে সহায়তা করবার নিমিত্ত আরও সাতজন দরবেশকে তিনি সঙ্গে আনয়ন করেন। এই দুই লেখকের বর্ণনায় বোকাইনগরে মধ্যযুগের বেশ কয়েকটি মাজারের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

মধ্যযুগের মাজারগুলির নামে পীরপাল দানের জমি দেওয়া হয়েছিল কিনা তা জানা যাবে জরিপের মাধ্যমে। পূর্বে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার নামে বোকাইনগরের তিনটি উঁচু স্থানের নামকরণ করা হয় নিজামাবাদ। জমিদার আমলে নিজামাবাদ গ্রাম; বর্তমানে সরকারি কাগজপত্রে এই গ্রামের একটি মৌজার নামকরণ হয়েছে নিজামাবাদ মৌজা। নিজামাবাদ মৌজার তিনটি আলাদা সিট রয়েছে। জরিপকালীন সময়ে মাজার কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নিজামাবাদ মৌজার তিনটি আলাদা সিটের ইতিহাস নিয়ে কথা হয়। 

তিনি বলেন, নিজামাবাদ মৌজার মাঝখানে ছোট ছোট মৌজা রয়েছে। যার ফলে মৌজাটি তিন খণ্ডে বিভক্ত। নিজামাবাদ মৌজার প্রথম খণ্ডের  গ্রামগুলি হচ্ছে মমিনপুর, মামুদনগর, দ্বিতীয় খণ্ডের গ্রামগুলি হচ্ছে মিরাকান্দা, ত্রিশঘর এবং তৃতীয় খণ্ডের গ্রামগুলি হচ্ছে নিজামাবাদ, পাঠানটোলা।

ইতিহাস অনুসন্ধান করে দেখা যায়, অনেকদিন আগে নিজামাবাদ জায়গাটি নদী বা জলাভূমি দ্বারা তিনটি দ্বীপে পরিণত হয়েছিল। এর জন্য ভৌগোলিক অবস্থান সর্ম্পকে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন। একসময়ে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের প্রশস্ততা ছিল ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটারের মতো।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, অনেক কিছু মানুষের অজানা রয়েছে। ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাম্মণ জমিদার’ বইয়ের লেখক শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘নিজামুদ্দীন আউলিয়ার দরগা’ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকায় ‘নিজাম ডাকাইতের পালা’ বর্ননা থেকে অনেক কিছু জানা গেছে। বর্তমান মাজারটির দু’টিপুনঃসংস্কার হয়েছে। প্রথম পুনঃসংস্কারটি জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর আমলে একটি লেখা থেকে জানা গেছে। তখন অনুমান করা হয়, মাজারটির সর্বপ্রথম পাকাকরণ শুরু হয়েছিল সুলতানি বা পাঠান আমলে। মাজারের সঠিক ইতিহাস না থাকায়, বারবার ইতিহাস বিকৃতির জন্য পূর্বের তুলনায় বর্তমান সময়ে মাজারের ঐতিহ্য অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। 

আগের তুলনায় বর্তমানে এখানে কোনো মেলা বা উরস হয় না। মাজারের গুরুত্ব ও ঐতিহ্য ফিরে আনতে হলে অনেক কিছু করা প্রয়োজন। যারা মাজার জিয়ারত করতে আসবে, তাদেরকে সরাসরি বলা যাবে না, এটি ডাকাত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার অথবা দিল্লি থেকে আগত নিজামুদ্দীন আউলিয়ার নামক একজন সিদ্ধ দরবেশের মাজার অথবা সিলেট থেকে আগত ৩৬০ জন আউলিয়ার মধ্যে একজন অথবা মধ্যযুগের নিজামুদ্দীন আউলিয়া নামে কোনো সুফি সাধক। তখন যে ব্যক্তি যে নিজামুদ্দীন আউলিয়াকে মনে করে এ মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবেন, ঠিক তা করা উচিত।

ইতিহাসে বিদ্যমান চার আউলিয়ার প্রতীক হিসেবে মাজারের সামনে শুধু লেখা থাকা উচিত ‘হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (র.) এর মাজার শরীফ : এক সুফি সাধক’। তখন বহু মানুষও এটিকে পবিত্র তীর্থস্থান বলে গণ্য করবে। দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত প্রতি বছর এই দরগা দর্শনে আসবে এবং বোকাইনগরকে পর্যটন নগর হিসেবে আরো সমৃদ্ধ হবে।

তথ্যসূত্র: শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘নিজামুদ্দীন আউলিয়ার দরগা’ ও ‘বোকাইনগরের  ইতিবৃত্ত’ (সংগ্রাহক-নেত্রকোণার ইতিহাস ঐতিহ্যের লেখক জনাব আলী আহাম্মদ খান আইয়োব) পূর্ববঙ্গ গীতিকায় ‘নিজাম ডাকাইতের পালা।’ 
প্রফেসর কাজী এম.এ  মোনায়েম এর ‘‘গৌরীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও কিংবদন্তী’’ 
চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর জেলা ও ফরিদপুর উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য; 
দিল্লির শেখ খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রা.) এর  জীবনী ও ইতিহাস। 
হযরত শেখ ফরিদ গঞ্জেশকর (রা.) এর জীবনী ও ইতিহাস। 
হযরত শাহ জালাল (রা.) এর জীবনী ও ইতিহাস। 
’পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স -২০২০’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ইতিহাস ঐতিহ্যের অনন্য নির্দশন চরফরিদপুর দরগা বাড়ী জামে মসজিদ ও পাশে একটি আধ্যাত্মিক ঘর। 
ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশন এবং দি ইলেক্টোরাল কমিটি ফর পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স এর যৌথ উদ্যোগে আড়াইশ' বছর আগে ব্রিটিশ ভূবিদ জেমস রেনেলের মানচিত্র সংগ্রহের মাধ্যমে মোমেনসিং পরগনার প্রাচীন নিদর্শন খোঁজার জন্য ২০২০ হতে জরিপ কার্যক্রম ও জরিপের ফলাফল হতে তথ্য সংগ্রহ।#

মন্তব্য করুন: