• ঢাকা

  •  শুক্রবার, জুন ৬, ২০২৫

জেলার খবর

দূর্ঘটনায় নিহতদের ৩ সন্তানের পাশে দাঁড়াল জনতার ঈশ্বরগঞ্জ

মোঃ আরিফুল হক

 আপডেট: ১৮:২৯, ৪ জুন ২০২৫

দূর্ঘটনায় নিহতদের ৩ সন্তানের পাশে দাঁড়াল জনতার ঈশ্বরগঞ্জ

ছবি- সংগৃহীত

ঈদে ৩ সন্তানকে নতুন জামা-কাপড় কিনে দেওয়ার কথা ছিল বাবার। বাবা মারা গেছে তা বুঝার বয়সও হয়নি ছোট ছেলে ইফতিয়ার হাসান নিহানের। মেঝো ছেলে নফিউল ইসলাম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে খোঁজছে বাবা ও তার দাদাকে। তেরো বছরের একমাত্র মেয়ে সানজিদা হোম ইভার মনেও নেই ঈদের আনন্দ। সম্প্রতি ওদের বাবা-দাদা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়ে পাশাপাশি কবরে শায়িত আছেন। তারাই ছিল পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নফিউল-ইভাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামে। 

নিহত সবুজ মিয়ার আক্ষেপ পূরণে তার তিন সন্তানকে ঈদে নতুন জামা-কাপড়, পরিবারের জন্য ঈদ সামগ্রী এবং নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনতার ঈশ্বরগঞ্জ।

ঈদ উপহার হিসেবে ছিল-নিহান ও নফিউলের জন্য শার্ট-প্যান্ট,ইভার জন্য জামা।

ঈদ সামগ্রীর মধ্যে ছিল- সুগন্ধি চাল,পেঁয়াজ-রসুন,আলু,মাংস,সেমাই-চিনি, সাবান,তেল,লবণ, মসলা,আদা ও কাচা-মরিচসহ যাবতীয় পণ্য। 

বুধবার (৪ জুন) সকালে নিহান-ইভাদের বাড়িতে গিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকাসহ ঈদ উপহার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন জনতার ঈশ্বরগঞ্জ টিম।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত আব্দুস ছোবান ও তার ছেলে সবুজ মিয়া স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করতো। প্রতিদিনেই বাড়ি থেকে বাবা ছেলে ময়মনসিংহ শহরে কাজ করতে যেত। প্রতিদিনের মতো গত (২৮ মে) তারা কাজে গিয়েছিল। সেদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের। ফিরেছিলেন লাশ হয়ে। আব্দুস ছোবানের ছয় মেয়ের মধ্যে ৫ জনকেই বিয়ে দিয়েছেন। সবার ছোট মেয়ে মোসা. সীমা আক্তার এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। 

নতুন জামা-কাপড় পেয়ে নিহান-ইভা ও নফিউল জানায়,'ঈদে নতুন জামা-কাপড় পেয়ে তাদের খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু ওদের চোখে-মুখে ছিল বাবার জন্য বিষণ্ণতার ছাপ।

সবুজের স্ত্রী আখলিমা আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,' ঈদে আমার ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দেওয়ার কথা ছিল ওদের বাবার। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সবাই আমার ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

নিহান-ইভার দাদু নাসিমা খাতুন বিলাপ করে তিনি বলেন,'আমার স্বামী-সন্তান বাইচ্চা থাকলে আজগোয়া (আজ) তারা আমার নাতিরারে জামা-কাপড় কিইন্ন্যা দিতো গো। ঈদে যারা আমার নাতি-নাতনির মুখে হাসি ফুটাইছে আল্লাহ তাদের বালা (ভালো) রাখুক।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ' গ্রুপের এডমিন মো. আরিফুল হক বলেন,' ইভা-নিহানের মতো আমিও ছোট বেলায় আমার বাবাকে হারিয়েছি। ওদের কষ্টটা আমি বুঝি। তাই

আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ'_এর পক্ষ থেকে এই পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা,ঈদ সামগ্রী ও তিন শিশুর জন্য ঈদ উপহার দিয়েছি। ঈদে ওদের মুখে হাসি ফুটাতে এবং আমাদের দেখে অন্যরাও যাতে এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, তাই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান বলেন,' কিছুদিন আগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত হয়েছিল। ইতোমধ্যে দেখেছি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন'জনতার ঈশ্বরগঞ্জ'পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে।তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পরিবারটিকে সহযোগীতা করেছি। বাবাকে  হারানো তিন সন্তান আলোকিত মানুষ হোক। ওদের জন্য দোয়া রইলো।

 

এসবিডি/ওবায়দুর রহমান

মন্তব্য করুন: