• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

জেলার খবর

রায়গঞ্জে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ২০:০২, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

রায়গঞ্জে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ

ছবি: সময়বিডি.কম

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈধ অবৈধ মিলিয়ে গড়ে উঠেছে ৬১টি ইটভাটা। সরকারি নানা নিয়ম থাকলেও তা তোয়াক্কা না করে এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। আর অন্যদিকে ভাটার কালো ধোয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।

নিয়ম অনুসারে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর কথা। তবে ইটভাটা মালিক সমিতি বলছে, কয়লা সংকটের কারনে তারা জ্বালানিতে কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। 

আর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা ইটভাটার জন্য বিখ্যাত। ছোট এই উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৬১টি ইটভাটা। আর প্রতিবছরেই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ইটভাটা। বছরের পর বছর ধরে চলছে নতুন ইটভাটা তৈরির হিড়িক। 

উপজেলার ৬১টি ইটভাটার ৩১টির নেই বৈধ অনুমোদন। জেলায় মোট ১৪০টি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের কর্যালয়ের তথ্য অনুসারে, সিরাজগঞ্জে ৪৬টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলোর চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই। 

এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হিসাব অনুসারে - ইট পোড়ানোর লাইন্সেস অনেকের থাকলেও অনেক ইটভাটা মলিকেরা তা বছর বছর নবায়ন করে না।

এদিকে হঠাৎ করে কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবার এসব ইটভাটায় একযোগে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।  একই সাথে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। আর এতে জমির উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। 

আর ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়ছে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র। 

ভাটা মালিকেরা বলছেন, প্রতি রাউন্ড ইট পেড়াতে প্রচুর পরিমানে কয়লা লাগে। বর্তমানে টাকা থাকলেও কয়লা নেই। আর কয়লার দাম বেড়েছে তিনগুন। যে কারনেই বাধ্য হয়ে ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। 

সেবা ইটভাটার মালিক বলেন, মৌসুমের এই সময়ে আমরা প্রচুর পরিমানে ইট তৈরি করি। তাই এই সময় জ্বালানির প্রয়োজন বেশি। কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়া ও বাজারে কয়লার যোগান না পাওয়ার কারনে এবার জ্বালানি হিসাবে কাঠের ব্যাবহার করা হচ্ছে। 

আরেক ব্যবসায়ী আহসান হাবীব আসলাম জানান, কয়লার দাম তিন থেকে চারগুন রেড়েছে। বাজারে পাওয়াও 
যায়না। 

এল আর ব্রিকসের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, সিজনে প্রতি রাউন্ড মানে ৭ থেকে ৮ লাখ ইট পোড়াতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। এক হাজার টন কয়লার দাম অগে ছিলো ৯০ লাখ টাকা এখন কিনতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকায়। টাকা থাকলেও কয়লা পাওয়া যায় না।

রায়গঞ্জ উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ খান জানান, কয়লা সংকটের কারনে তারা জ্বালানিকাঠ দিয়েই ভাটা চালাচ্ছেন। তবে এতে পরিবেশের ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তারা। তবে উপায় না থাকায় তারা জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। 

এদিকে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন মুক্ত জীবনের সভাপতি দীপক কুমার কর বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রায়গঞ্জ উপজেলায় নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে ইটভাটা চললেও নেই কোনো দপ্তরের উদ্যোগ। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।

রায়গঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাচ্চু বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সমন্বয়সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

রায়গঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা দেওয়ান শহিদুজ্জামান বলেন, খুব শীঘই তারাও অভিযানে নামবেন। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ালেই জরিমানাসহ ইটভাটা বন্ধের সুপারিশ করবেন তারা। 

রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিল পারভেজ জানান, ইতোমধ্যেই তিনটি ইটভাটায় জরিমানা করা হয়েছে। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার রোধে মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে শর্ত ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।

ডিসেম্বর ৩, ২০২২

মৃণাল সরকার মিলু/এবি/

মন্তব্য করুন: