চুয়াডাঙ্গার কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

ছবি: সময়বিডি.কম
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম করে নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে চারটি পদে নিয়োগ দিতে ৪১ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
গত ১০ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবেলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে অনুষ্ঠিত এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনিয়মে সহযোগিতা করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চুয়াডাঙ্গা ভিক্টরিয়া জুবেলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বজলু ও ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য ওয়াহিদ রাশেদীন আমিন।
কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বজলু জানান, 'বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক শিক্ষা ও স্থানীয় দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এসব পদে ৪০ জন আবেদন করেন। এরমধ্যে ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট পদে ৯ জন, অফিস সহায়ক পদে ১৩ জন, নিরাপত্তাকর্মী পদে ৬ জন ও আয়া পদে ১২ জন নিয়োগ প্রত্যাশী আবেদন করেন।নিয়োগ প্রত্যাশীদের চারজনের সঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্যের সঙ্গে গোপনে ৪১ লাখ টাকা আর্থিক সুবিধা নেওয়ার সমঝোতা হয়। এ বিষয়টি জানাজানি হলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। চাঞ্চল্যকর এই বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, জেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই সময় জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান তদন্ত কমিটি গঠন করেন। অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্র তৈরি করার কারণে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আরা চৌধুরী চলতি বছরের ২৭ জুন নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশের মধ্যে ছিলো আবার নতুন করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এরপর যথাযথ নিয়ম মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু সেগুলোর একটিও না মেনে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বজলু এবং ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলবাজারে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা কামিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার জেলা প্রতিনিধি ওয়াহিদ মোঃ রাশেদীন আমিন রাজন অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ফরজ আলীর ছেলে রিপন আলীকে ৯ লাখ টাকা ও একই উপজেলার রামনগর গ্রামের ছাগবার আলীর মেয়ে জুলেখা খাতুনকে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেন। এ অনিয়মে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান ও দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিন ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চুয়াডাঙ্গা ভিক্টরিয়া জুবেলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন। পরবর্তীতে নিদিষ্ট আরো ২ জন নিয়োগ পাবেন। এরা হলেন, ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুর রাব্বি ও অফিস সহায়ক হিসেবে একই ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে ইয়াছিন আলী। এ দুজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা করে মোট ২৪ লাখ টাকা নিয়ে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।'
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর রবিবার নিয়োগ পরীক্ষা আবারো নেওয়ার জন্য একটি আবেদনপত্র দিয়েছেন দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে রকিবুল হাসান।
ওই আবেদনে তিনি জানান, কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তাকর্মী পদে প্রার্থী হয়ে আবেদন করার পরও পরীক্ষার দিন তাকে ডাকা হয়নি। গত ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বজলু তার পছন্দের প্রার্থী গোপালপুর গ্রামের ফরজ আলীর ছেলে রিপন আলীকে (৩৬) তার বাড়িতে ডেকে ৯ লাখ টাকা নিয়ে তাকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা বলেন। যা বৈধ হয়নি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বজলু বলেন, এ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানের চারটি পদে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এরমধ্যে নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই পরীক্ষায় আর্থিক সুবিধা নেওয়া দুজন ছাড়া আর কোনো প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি পদে ৩জন প্রার্থী উপস্থিত না হলে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। আমরা সেই নিয়ম মেনেই পরীক্ষা শেষ করেছি। এবার যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শ্যালক বিটিভির প্রতিনিধি রাশেদীন আমাকে বলেছেন উনি সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেছেন। ওই কথা শুনে আমি আমার মতো ব্যবস্থা নিয়েছি।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটি যদি নিয়োগ সংক্রান্ত কোন অনিয়ম করে থাকে তা তদন্ত করে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির জেলা পর্যায়ের সভায় কলাবাড়ী-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে এ ব্যাপারটি দেখার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিলো। তাছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রাস্ত এক প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কিভাবে হলো তা তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নভেম্বর ১৭, ২০২২
সালাউদ্দীন কাজল/এবি/
মন্তব্য করুন: