• ঢাকা

  •  সোমবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫

জেলার খবর

সেপটিক ট্যাংকে পড়ে শিশু ফাতেমার মৃত্যু: পরিবারের দাবি হত্যা

মোঃ আরিফুল হক

 প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সেপটিক ট্যাংকে পড়ে শিশু ফাতেমার মৃত্যু: পরিবারের দাবি হত্যা

ছবি- সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে পড়ে কানিজ ফাতেমা (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।  শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক বেলা ১ টার দিকে উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর পূর্বপাড়া গ্রামের কাওসার মিয়ার নবনির্মিত বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে পড়ে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট  সেপটিক ট্যাংক থেকে ফাতেমার মরদেহ উদ্ধার করে লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। শিশু ফাতেমা একই গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে। কামালের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ফাতেমা দ্বিতীয়। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে,শুক্রবার দুপুরে বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় বসতবাড়ির পাশে থাকা প্রতিবেশী কাওসারের উপস্থিতিতে তাঁরই অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে পড়ে শিশুর মৃত্যু হয়। নিহত শিশুর মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা বাড়ির সামনে যখন খেলছিল। তখন প্রতিবেশী কাওসারও ঘর নির্মাণের কাজ করছিল। দুপুরে মেয়েকে গোসল করাতে ডাকছিল তার বাবা। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে যেখানটায় খেলছিল সেখানে নেই,তার পাশে কাজ করা প্রতিবেশী কাওসারও নেই। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে কাওসারের নির্মাণাধীন বাড়ির অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে ভেসে আছে। আমাদের সন্দেহ ফাতেমাকে কাওসার সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে মেরেছে। আমার মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই,যাতে এভাবে আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। তিনি আরও বলেন, কাওসারের নির্মাণাধীন ঘরের ছাদে প্রায়ই আমার ছেলে-মেয়েরা খেলাচ্ছলে উঠে পড়তো। এতে কাওসার রাগ পেত। আমরা বেশ কয়েকদিন ছাদের সিঁড়িতে গেট এবং অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে ঢাকনা দিতে কাওসারকে বলেছি। কিন্তু সে বলেছে- একটা (ছেলে-মেয়ে) মরলে পরে ঢাকনা দেম(দিব),এখন তাই হয়েছে। 

সরেজমিন পরিদর্শনকালে নিহত শিশুর বাবা কামাল হোসেন বলেন ‘এই অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকে আমার মেয়ে  মারা গেছে। নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলে-মেয়েগুলোকে লালন-পালন করেছি। আমার মেয়ে খেলনা চেয়েছিল, গতকাল খেলনাপাতি কিনেও দিয়েছি। কিন্তু সেই খেলনাগুলো দিয়ে মেয়েটা ভালো করে খেলে যেতেও পারলো না।  তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাধিকবার  নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক কাওসারকে অরক্ষিত সেপটিক ট্যাংকির বিষয়ে  জানালেনও সে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমি এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি জানাচ্ছি।’

ঘটনার পর থেকে প্রতিবেশী কাওসার মিয়া পলাতক আছেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি এবং তাদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রাম প্রসাদ পাল বলেন,সেপটিক ট্যাংকে শিশু পড়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের ১টি ইউনিট যায়।ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশু ফাতেমাকে উদ্ধার করে তার মরদেহ বডিব্যাগে ভরে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ  ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

এসবিডি/ওবায়দুর রহমান

মন্তব্য করুন: