• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

ফিচার

প্রিয়জন সব সময় থাকুক মনের মাঝে

ইকবাল কবীর রনজু

 প্রকাশিত: ০০:০২, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

প্রিয়জন সব সময় থাকুক মনের মাঝে

মডেল: মাহফিজুল আনাম সুজন ও শামিমা নাসরিন লিপি।

প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হয় ভালোবাসা দিবস। এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল পহেলা ফাল্গুনও। এ দুই মিলে দিনটিতে বিরাজ করছিল অন্য রকম আমেজ। কিন্তু শুধু কি এ দিনটিই ভালোবাসার দিন? প্রিয় পাঠক ভালোবাসা দিবস বা অন্য যে কোন বিশেষ দিবসকে একটু বেশি গুরত্ব দিলেও অন্যদিনে আপনার সঙ্গীকে ভালোবাসতে ভূলে যাবেন না। ভালোবাসায় কি কোনো ক্লান্তি আছে? প্রিয়জনকে ভালোবাসেন না এমন কেউ কি আছেন? বোধ হয় নেই। আবার নিখাঁদ ভালোবাসা বলে কিছু আছে কি? অনেককেই বলতে শোনা যায় - অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। এ কথা কি একেবারে মিথ্যে? স্বার্থ ছাড়া কেউ কি কাউকে ভালবাসে? এর পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই জোড়ালো যুক্তি দাঁড় করাতে পারেন। তবে যে যেমনটাই ভাবুন না কেন, যেমনই থাকুন না কেন ভালোবাসার কোনো বিকল্প নাই। সৃষ্টির আদি থেকেই আমরা এর প্রকাশ দেখতে পাই। 

কৃষিভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রথম পর্যায়ে মেয়েরা যখন বাড়ির আশেপাশে বীজ ছিটিয়ে ফসল পাওয়া শুরু করলো এবং তা যখন খাদ্যের চাহিদা মেটাতে শুরু করলো তখন থেকেই মেয়েরা পছন্দমতো কোন পুরুষ সঙ্গীর সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কালক্রমে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-আধুনিক রাষ্ট্র। এতো বিবর্তনের মাঝেও ভালোবাসার আবেদন একটুও কমেছে কি? কমেনি। বদলেছে কেবল প্রকাশের ভঙ্গি। কাগজ আবিষ্কারের পর মানুষ প্রেমপত্র লেখা শুরু করার পর থেকে দীর্ঘদিন চিঠির মাধ্যমে ভালোবাসার আদান প্রদান করেছে। সাহিত্যের মাঝে দেখা গেছে কবুতরকে প্রেমপত্রের বাহক বানাতে। ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন, ফেসবুক, মেসেঞ্জারসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যম আজকের তরুণদের ভালোবাসার প্রকাশের মাধ্যম হয়েছে। আগে এবং এখনো অনেক ছেলে বা মেয়ে সরাসরি ভালোবাসার কথা প্রিয়জনকে অবলীলায় বলতে পারলেও অনেকে সাহস পান না। যারা সাহস পান না তারা মনের গভীরেই সযতনে রাখেন তার প্রিয়জনকে। আবার কেউ অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মনের ভাল লাগার কথা প্রিয়জনকে বলে থাকেন। 

শুধু মানুষই নয় অন্যান্য প্রাণীকূলও ভালোবাসা পাবার আশায় অবিশ্বাস্য রকমের কাজ করে থাকেন। সঙ্গীর কাছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে মরিয়া হন। বিবেক বোধ সম্পন্ন মানুষ এবং বিবেক বর্জিত প্রাণীকূল উভয়ই যখন ভালোবাসার এত কাঙাল তবে সে ভালোবাসায় কেন খাদ থাকবে? কেন ভালোবাসার নামে প্রতারণা। ছলনা?

একই ছাদের নিচে বছরের পর বছর পার করছেন। তার মনকে আপনি কতটুকু চিনেছেন। সেকি আপনাকে সত্যি ভালোবাসে ? অথবা আপনি ? আপনি কি তাকে সত্যি ভালোবাসেন ? নাকি খাপ খাইয়ে চলতে হয় তাই মানিয়ে চলা। সামাজিকতা রক্ষার জন্য এক সাথে বসবাস করছেন। বছরের পর বছর প্রেম করার পর পছন্দের সেই মানুষটিকেই বিয়ে করেছেন। আপনার প্রিয়জনের প্রতি বিয়ের আগে আপনার যতটা অনুভূতি ছিল, টান ছিল, প্রেম ছিল, ভালোবাসা ছিল, এখনো কি ততটাই আছে ? ভালোবাসা কমেছে না বেড়েছে। যদি বেড়ে থাকে তবে আপনি ভাগ্যবান। আর যদি কমে থাকে তার কারণ অনুসন্ধান করুন। ভূলে যাবেন না সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রভাব ফেলবে আপনার সন্তান সন্ততির উপর। এতে আপনার মেজাজ খিটখেটে হতে পারে। আর দেহ মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াবাদ হিসেবে আপনার মন খারাপ হলে দেহ খারাপ হতে বাধ্য। পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে আপনি হেয় প্রতিপন্ন হবেন। যার প্রভাব পরবে আপনার ব্যক্তিত্বের উপর।

প্রিয়জনের কেবল দোষগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে না ধরে তার ভালো গুনগুলো সম্পর্কে ভাবুন। সম্পর্ক ভালো হলে, গভীর প্রেম হলে ভবিষ্যত জীবন কত সুন্দর হতে পারে এগুলো বুঝাতে পারেন। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব উপহার সামগ্রী কিনে দিতে পারেন। একটু অবসর পেলে ঘুরতে বেরুতে পারেন। একে অন্যের মতামতকে সম্মান করুন। মতের দ্বৈততা সৃষ্টি হলে এর সুফল কুফল সম্পর্কে বার বার ভাবুন। কিভাবে ঐক্যমতে পৌঁছা যায় সে পথ খুঁজুন। প্রয়োজনে উভয়ে মিলে শুভাকাঙ্খীদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করুন।

রাত্রি নিঝুম হলে তুমি এলে/ রেখেছিলাম স্মৃতির অতল তলে/ ঘুমাতে পারিনি আমি হয়তো তাই/ বার বার আসো পথ ভূলে। প্রিয় পাঠক, আমার লেখা এ গানটির মতো প্রিয়জনকে আমরা যেন স্মৃতির অতল তলে না রাখি। কেবল রাত্রি নিঝুম হলেই নয়, সব সময় প্রিয়জন থাকুক মনের মাঝে। প্রিয়জনের স্মৃতি রোমান্থন করে আমরা ঘুমাতে পারছি না এমন রাত না আসুক। প্রিয়জন যেন পথ ভূলে মনে না আসে; মনের টানেই যেন প্রিয়জন থাকে মনের মাঝে। বিশেষ কোনো দিন নয়, প্রতিটি দিনই হোক ভালোবাসার দিন।

মন্তব্য করুন: