• ঢাকা

  •  সোমবার, মে ৬, ২০২৪

ভিনদেশ

ভারতের অরুণাচল প্রদেশ অন্তর্ভূক্ত করে নতুন মানচিত্র চীনের

অনলাইন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ১৮:২৮, ৩০ আগস্ট ২০২৩

ভারতের অরুণাচল প্রদেশ অন্তর্ভূক্ত করে নতুন মানচিত্র চীনের

বামে চীনের নতুন মানচিত্র, ডানে ভারতের মানচিত্র।

চীন সরকার তাদের দেশের নতুন মানচিত্রে ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ নিয়ে বেইজিং ও দিল্লির মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। শুধু অরুণাচলই নয়, ‘আকসাই চিন’ নামে লাদাখ-সংলগ্ন যে ভূখন্ডটিকে ভারত নিজেদের বলে দাবি করে থাকে সেটিও চীনের এই নতুন ম্যাপে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, এই মানচিত্র প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মন্তব্য করেছেন, “কেউ একটা আজগুবি দাবি করলেই অন্যের ভূখন্ড তার হয়ে যায় না!” এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এটিকে চীনের ‘পুরনো একটা বদভ্যাস’ বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।

চীনের এই মানচিত্র প্রকাশ করা হলো এমন একটি সময়ে, যার দিনচারেক আগেই জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হয়েছে। এমনকী, আগামী সপ্তাহে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে চীনা প্রেসিডেন্টের দিল্লিতে আসারও কথা রয়েছে। ফলে দুদেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকলেও সীমান্তে বা কূটনৈতিক পর্যায়ে যে উত্তেজনা রয়েই গেছে, চীনের নতুন এই ম্যাপকে পর্যবেক্ষকরা তারই সবশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।

সাম্প্রতিক অতীতে ভারত একাধিকবার বলেছে অরুণাচল কখনোই একটি বিতর্কিত ভূখন্ড নয় - বরং তা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভারতের বিভিন্ন বিরোধী দল অবশ্য এর মধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, চীন যেখানে একটার পর একটা উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে তখন চীনের প্রেসিডেন্টকে দিল্লিতে ‘আপ্যায়ন’ করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত হচ্ছে।

বিজেপি নেতা সুব্রমনিয়ান স্বামী আবার এই বিতর্কে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে লিখেছেন, “ভারত মাতার অখন্ডতা রক্ষা করতে না-পারলে আপনিই বরং সরে দাঁড়ান!”

কী আছে এই নতুন মানচিত্রে?

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ সোমবার (২৮ অগাস্ট) জানায়, সে দেশের ‘স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপে’র ২০২৩ সংস্করণ সে দিনই প্রকাশ করা হয়েছে এবং চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তা লঞ্চও করা হয়েছে।

ওই নতুন ম্যাপের ছবি পোস্ট করে আরও জানানো হয়, চীন-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের ‘জাতীয় সীমানা’ আঁকার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে, সেই একই পদ্ধতিতে এই মানচিত্রটিও সংকলন করা হয়েছে।

ওই মানচিত্রটিতে ভারতের পুরো অরুণাচল প্রদেশ অঙ্গরাজ্যটি এবং ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর চীনের দখলে চলে যাওয়া ‘আকসাই চিন’কে সে দেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়।

এছাড়া তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরের ‘নাইন-ড্যাশ লাইন’-কেও নিজেদের ম্যাপের ভেতরে দেখিয়ে ওই দুই অঞ্চলের ওপরেও এক ধরনের অধিকার দাবির চেষ্টা করা হয়।

ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অরুণাচল প্রদেশকে চীন অবশ্য বহুদিন ধরেই একটি ‘বিতর্কিত ভূখন্ড’ হিসেবে দাবি করে আসছে। তারা বলে থাকে অরুণাচল হল আসলে দক্ষিণ তিব্বতেরই একটা অংশ।

অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা কোনো ভারতীয় নাগরিক চীনের ভিসার জন্য আবেদন করলেও তাদের পাসপোর্টে ছাপ না-মেরে চীন স্টেপল করা একটি কাগজে ভিসা দিয়ে থাকে - ভারত বহুদিন ধরেই যে রীতির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। অর্থাৎ এই ‘স্টেপলড ভিসা’র মাধ্যমে চীন বোঝাতে চায় অরুণাচলের বাসিন্দাদের তারা ভারতের নাগরিক বলে মনেই করে না।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের সরকারি ম্যাপে গোটা রাজ্যটাকেই চীনের অংশ হিসেবে দেখানোর ঘটনা এই প্রথম ঘটল।

এর আগে গত এপ্রিল মাসেই চীনের পক্ষ থেকে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন জায়গার চীনা বা তিব্বতি নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, ভারতের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী তখন বলেছিলেন, “কোনো দেশ একটা জায়গার কাল্পনিক নাম দিলেই সেটা তাদের হয়ে যায় না। অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে ও থাকবে।”

অনেকটা একই সুরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও আজ চীনের প্রচেষ্টাকে খন্ডন করতে চেয়েছেন।

তবে অরুণাচল প্রদেশের ওপর নানাভাবে নিজেদের দাবি জানিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় চীন যে বিরাম দিতে রাজি নয়, তাদের সবশেষ এই পদক্ষেপেই তা স্পষ্ট।

‘কার্টোগ্রাফিক অ্যাগ্রেশন’
ভারতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে যে ধরনের ‘প্ররোচনামূলক’ পদক্ষেপ নিয়ে চীন ভারতকে তাতাতে চাইছে কূটনৈতিক পরিভাষায় তাকে বলে ‘কার্টোগ্রাফিক অ্যাগ্রেশন’ বা মানচিত্র দিয়ে আগ্রাসন।

তবে ভারতের পক্ষে এটা আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে এই কারণে যে দেশের বিরোধী দলগুলো বহুদিন ধরেই বলে আসছে, সীমান্ত অঞ্চলে প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার ভারতীয় ভূখন্ড চীনের দখলে চলে গেছে বলে তাদের ধারণা।

কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধী গত সপ্তাহে লাদাখে গিয়েও একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেছেন।

আগস্ট ৩০, ২০২৩

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: