• ঢাকা

  •  মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

অপরাধ

পমপম গ্রুপের সবাই নামিদামী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ২১:৫১, ২৩ মে ২০২৩

পমপম গ্রুপের সবাই নামিদামী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

ঢাকা: কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৯ তরুণ মিলে গড়ে তুলেছিল টেলিগ্রাম গ্রুপ 'পমপম'। তারা নানা প্রলোভনে তরুণ-তরুণীদের আপত্তিকর ভিডিও জোগাড় করে ছাড়তো লাখ চারেক সদস্যের বিশাল অনলাইন গ্রুপে। এতে তাদের আয় ছিল বছরে কোটি টাকারও বেশি। পমপম গ্রুপের এই ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে সিআইডি পুলিশ। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত রবিবার চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা হলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আবু সায়েম ওরফে মার্ক-সাকারবার্গ, শাহরিয়ার আফসান ওরফে অভ্র, বোগদাদী শাকিল, মশিউর রহমান ওরফে ডিটিআর শুভ, মো. জসীম, কেতন চাকমা ওরফে ক্যাকটাস, শাহেদ ওরফে এল ডোরাডো, মারুফ ওরফে তুর্য এবং নাজমুল সম্রাট ওরফে মিঞা ভাই।

সিআইডি বলছে, টেলিগ্রামে এই অশ্লীল ভিডিও আদান-প্রদান চক্রের মূল হোতা ছিলো আবু সায়েম। টেলিগ্রামে তার গ্রুপ সংখ্যা ছিলো ১০টি। এসব গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন প্রায় ৪ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারি। ব্যবহারকারীদের জন্য প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনেরও ব্যবস্থা ছিলো। এর জন্য খরচ করতে হতো ১ থেকে ২ হাজার টাকা।

সোমবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীরা এই প্রতারকদের কোনো প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তাদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্য লাখো গ্রাহকের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দেওয়া হচ্ছিল। ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কেবল টাকা আদায় করা নয়, ওই সব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করেছে। মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশে অবস্থানরত বহু ব্যক্তি গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্প বয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওই সব ছবি–ভিডিও কিনে সংরক্ষণ করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন আবু সায়েম। তিনি থাকেন চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী, তার বয়স ২০ বছর। তিনি চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করেছেন। তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার ওপরে লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এক ভুক্তভোগী তরুণ এবং তার প্রেমিকার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ‘পমপম’ গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ায় ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সায়েম ও তার দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।

গ্রুপের এডমিনরা প্রথমে পাবলিক গ্রুপ থেকে ভিডিও শেয়ার করতো। পরে টাকার বিনিময়ে ক্লোজগ্রুপে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেওয়া হতো পর্ণ ভিডিও। এডমিনদের সবার বয়স ২০ থেকে ২২ বছর। পড়ালেখা করতেন নর্থসাউথ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, শ্যামলী ও সিলেট পলিটেকনিক্যালে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি স্টিল পিকচারের কথা ধরি তাহলে প্রায় ৩০ হাজারের মতো আর ভিডিও প্রায় ২০ হাজারের মতো আমরা পেয়েছি।

‘আর প্রাইভেট গ্রুপগুলোতে কিন্তু যারা সাবস্ক্রাইবার ছিলো তারা কেউ হয়তো কন্টিনিউ করতো না, বের হয়ে যেতো। আবার অ্যাড করতো, এভাবে চলতো।’

একান্ত মুহুর্তের ভিডিও কিনতো সায়েম। কোন কোন ভিডিও কেনা হতো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এছাড়া, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুক রিলের ভিডিও ও ছবি ডাউনলোড করেও এডিট করতো তারা।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ হয়তো মেয়েদের সাথে কথা বলতে চায় বা ভিডিও চ্যাট করতে চায়। এরা তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতো। সেটার জন্য একটা লিমিট থাকতো।

‘১০ মিনিটের জন্য ৫শ টাকা, ২০ মিনিটের জন্য ১ হাজার টাকা বা তারও বেশি। তাদের সাথে ভিডিওতে কথা বলবে, ছবি দেখবে।’

গ্রুপে থাকা ভিডিও কেউ ডিলিট করতে চাইলে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হতো। এক বছর ধরে চলা গ্রুপে শুধু সায়েমের ব্যাংক হিসাবেই ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে বলে জানায় সিআইডি।

সায়েমকে গ্রেপ্তারের পর তার মুঠোফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ নামের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘পমপম’ গ্রুপের যতো চ্যানেল ও গ্রুপ আছে, সেগুলোর অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এসব অ্যাডমিনের কাজ ছিল সায়েমের হয়ে নতুন নতুন ছবি–ভিডিও জোগাড় করা।

সাবেক প্রেমিকেরাও দেন ছবি-ভিডিও
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকেরাও এই টেলিগ্রামে গ্রুপে নতুন নতুন ছবি-ভিডিও দিয়েছেন। ভালো সম্পর্কের সময়ের বিভিন্ন ছবি-ভিডিও তারা সায়েমকে দিয়ে দিতেন। সায়েম তার অ্যাডমিনদের দিয়ে সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে এবং ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের ভিডিও বানিয়ে গ্রুপগুলোতে প্রচার করতেন। এসব দেখে যারা পুরো ভিডিও দেখতে চাইতেন, তাদের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হতো।

মে ২৩, ২০২৩

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: