বাঁশঝাড়ের নিচ থেকে মিলল বস্তাবন্দী নিখোঁজ প্রবাসির মরদেহ!

ছবি- সংগৃহীত
ডোবার পাশে বাঁশঝাড়ের নিচে দুইদিন ধরে শিয়াল-কুকুরে ঝগড়া করছিল। আর তা দেখে কৌতুহলি লোকজন কাছে গিয়ে দুর্গন্ধ পেয়ে গর্ত দেখে খোঁজ করে দেখতে পান মাটির নিচে বস্তাবন্দি মরদেহ। পরে জানা যায় ওই মরদেহ তিনদিন আগে নিখোঁজ হওয়া স্থানীয় এক প্রবাসির। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হাত পা-বাঁধা, চোখ উপড়ানো লাশ উদ্ধার করে।
গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এমন ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের নান্দাইলের শেরপুর ইউনিয়নের সংগ্রামকেলি বাজারের একটি দোকানের পিছনে। এ ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়রি হলে গতকাল শুক্রবার নিখোঁজ যুবকের পড়নের কাপড়-চোপড় পাওয়া যায় স্থানীয় একটি বিলের পাশে।
স্থানীয়, নিহত প্রবাসির পরিবার ও থানায় করা জিডিসূত্রে জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের সংগ্রামকেলি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আলমগীর হোসেন আলীম (৩৩)। দীর্ঘ পাঁচ বছর সৌদি আরবে অবস্থানের পর ছুটিতে বাড়ি আসেন। তাঁর এলাকায় একটি চক্র দেদারছে মাদকের ব্যবসা করে আসছে। এ নিয়ে প্রবাসি আলীম প্রতিবাদ করলে মাদক ব্যবসায়ী মাসুদ, কাজল, সাদেক, খাইরুল রাজন, সাইকুল সহ অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে আলীমের সাথে বিরোধে জড়ায়। গত প্রায় পনেরদিন আগে এ নিয়ে পাশের কাদিরপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মাসুদ, সিদ্দিকের ছেলে সাদেক সহ ১০/১২জন আলীমের বাড়িতে গিয়ে নানা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে প্রাণ নাশের হুমকী দেয় ও এক পর্যায়ে ধরে আনার চেষ্টা করে। এতে ভীত হয়ে আলীম স্থানীয় সংগ্রামখেলি বাজারের অনেককে বিষয়টি অবহিত করেন। এ ঘটনার আটদিন পর গত বুধবার(২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১ টার দিকে আলীম নিখোঁজ হন। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজের তিনদিন পর গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ির অনতিদূরে বাফাইল বিলের পাশে নিখোঁজ আলীমের পড়নে থাকা জিন্সের প্যান্ট,শার্ট ও সর্ট প্যান্ট পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে এগুলি উদ্ধার করলেও আলীমের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার বিকেলে স্থানীয় সংগ্রামকেলি বাজারে জনৈক রিপনের দোকানের পিছনে একটি ডোবার পাশেই বাঁশঝাড়ের নিচে শিয়াল ও কুকুরের ঝগড়ার শব্দ শুনে ওই স্থানে যায় স্থানীয় লোকজন। পরে দুর্গন্ধ ও এক জায়গায় একটি গর্তের সুরঙ্গের ভিতর থেকে দেখা যায় একটি প্লাস্টিকের বস্তা। পরে সাদেক মিয়া একজন মাটি খুড়ে জানায় এটাই নিখোঁজ হওয়া আলীমের লাশ।
নিহতের ভাই শাহ আলম জানান, যে সাদেক মাটি খুঁড়ে তাঁর ভাইয়ের লাশের সন্ধান দেয় সেই সাদেক কয়েক দিন আগে প্রকাশ্যে হুমকী দেয় আলীমকে মেরে ফেলার। আর এই সাদেকের চক্রটিই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারাই তাঁর ভাইকে হত্যার পর লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে।
নিখোঁজ আলীমের মা মনোয়ারা বেগম জানান, গত বুধবার রাত ১১ টার দিকে আলীম প্রতিদিনের মতো বাড়িতে এসে গোয়াল ঘরে গরুগুলিকে খাবার দিয়ে নিজের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ওই সময় হঠাৎ তাকে (মা) বলে খাবার ডেকে রাখতে, বাহিরে একটু যাবে আর আসবে। এর পর থেকে আর ফিরে আসেনি।
তিনি আরও জানান, তাঁর ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী মাসুদ, কাজল, সাইকুল সাদেক, খাইরুল ও রাজনসহ অনেককেই মাদক ব্যবসায় বাধা দিয়ে আসছিল। এই ক্ষোভে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করে।
নান্দাইল থানার ওসি খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চলছে।
এসবিডি/ওবায়দুর রহমান
মন্তব্য করুন: