অধ্যাপক যতীন সরকারের চিরবিদায়

দেশবরণ্যে বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, উদীচীর সাবেক সভাপতি, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই।

বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গত ৮ আগস্ট যতীন সরকার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বিকেল পৌনে তিনটায় তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

তিনি বলেন, যতীন সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। আগে থেকেই কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেই সঙ্গে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে।

গত জুন মাসে পড়ে গিয়ে উরুর হাড়ে আঘাত পেয়েছিলেন। পরে তাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে ময়মনসিংহে নেওয়ার পর সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হলে তাকে নেত্রকোণার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিন-চারদিন আগে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

যতীন সরকারের শেষকৃত্য নেত্রকোণার চন্দপাড়া গ্রামে হবে।

অধ্যাপক যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 

লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।

৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে যান নিজ জেলা নেত্রকোনায়।

তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’। এ প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর পাশাপাশি শিশুদের জন্য সুপাঠ্য একটি ব্যাকরণ গ্রন্থও রচনা করেন তিনি। বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণ গ্রন্থের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে চারটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি।

যতীন সরকার দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ উদীচীর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে নেওয়া হবে।