• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

সাহিত্য-সংস্কৃতি

মা ‖ সুমন বিশ্বাস

 প্রকাশিত: ১৮:০৭, ৩১ অক্টোবর ২০২২

মা ‖ সুমন বিশ্বাস

ঘেন্না যারে জীবনজুড়ে; ভুল সে ইতিহাস,
মন থেকে চাই স্মৃতিরা সব- হোক সমূলে নাশ।
কস্মিনকালে মানবো না যা; এমন ছিলো পণ,
সেই করেছে গড়তে আমায়- জীবনজুড়ে রণ।
বলবো আজি সেসব কথা, খুলে বদ্ধ দ্বার,
বহুর ঘৃণ্য মনোভাবের- করবো পরিষ্কার।

কুমারী শেফালি রানির, গাঁয়ে ছিলো বাস,
যবন প্রেমে টানলো তারে; ধর্মে দিলো ফাঁস।
আঁধার রাতে পালিয়ে গেলো, প্রেমিকের হাত ধরে,
বিয়ের পরে শারমিন হয়ে- উঠলো স্বামীর ঘরে।
আসল স্বরূপ উঠতে ফুটে, লাগলো না তো দেরি,
টাকার লোভে প্রতারণায়- করলো তারে ফেরি।
তখন ছিলো গর্ভবতী, জানতো সেটা আলী,
তবু সরল ভালোবাসায়- বিষ দিলো সে ঢালি।

সত্য যখন জানতে পেলো, মাথায় আকাশ ভাঙে,
ভাটির টানে জল শুকালো- জীবন নামের গাঙে।
মরবে ভেবে ফ্যানের সাথে, শাড়ি দিলো বেঁধে,
আমায় ভেবে খাটে শুয়ে- উঠলো জোরে কেঁদে।
সর্দারীনী আসলো ছুটে, মারতে গেলো লাথি,
ডুকরে কেঁদে বলে, ও মা- আমি যে পোয়াতি!
থেমে গিয়ে দাঁত খিচিয়ে, ভীষণ গেলো রেগে,
চুল ছিড়ে নেয় নিজের মাথার- হতাশাতে জেগে।

কয়, 'খানকি, কী শোনালি? মাথায় দিলি বাড়ি,
তোর ঐ ভাতার ঠকিয়ে টাকা- নিলো কাড়িকাড়ি!'
এক্ষুণি চল, ফেলে দিবি, তোর ভাতারের রক্ত,
নাঙ চড়ানো টাকায় কেনা; বাঁধন আমার শক্ত!'
তিন মাস পার হয়ে গেছে, আর যে সুযোগ নাই,
সন্তান দায় তোর কাছে মা- এটুক দয়া চাই।
ঠকাবো না তোকে আমি, দিচ্ছি কথা মুখে,
আসবে টাকা, চড়বে পুরুষ, আমার যোনি বুকে!

দস্যি মাসী ক্ষান্ত হলো, সকল শর্ত বিনে,
সময় গিয়ে বাচ্চা এলো- ঝলমলে এক দিনে।
ছেলেটা তোর দারুণ ওরে, বললো দেখে সবাই,
তারে কেনা নারীর মুখে- কেবল হাসি নাই।
ভেবেছিলো মেয়ে হলে, করবে উসুল টাকা,
সুদ-আসলে উসুল হবে; দুঃখ পড়বে ঢাকা।
আর তো দেরি সয় না মোটে, তাগিদ দিয়ে যায়,
'শুবি কবে খানকিমাগী; বাড়ছে ঋণের দায়!' 

অগত্যা হয় পণ্য সে যে, পুরুষ চড়ে গায়,
শরীর বেচে ঋণের বোঝা- প্রতিদিন কমায়।
দিন পেরিয়ে নিজের পায়ে, হাঁটতে শেখে পুত্র,
কেমন করে করবে মানুষ; খুঁজতে থাকে সূত্র।
একটি বাঁধা খদ্দের তার, হাত-পা ধরার চোটে,
ভালোমানের ইশকুল ঠিক- ছেলের ভালে জোটে।
প্রচুর খরচ প্রতিমাসে, থাকে আরও হলে,
যোগাতে তা শারমিন টানে- পুরুষ দলে দলে।

বিপদ হতো আসতো যখন, ছুটি পেয়ে ছেলে,
থাকতো ঘরে সব লুকিয়ে- দিতো না গা মেলে।
ওই কটা দিন থাকার তরে, সারা বছর ধরে,
ভাড়ার টাকা দিতে হতো- মালিকের হাত ভরে।
ছদ্মবেশী ছিলো সে লোক, গাইতো রমণ গান,
শারমিন তাই বাধ্য হয়ে- পাততো শরীরখান।
ছেলের বায়না করতে পূরণ, বাদ কিছু রাখতো না,
বাবার খবর চাইলে নিতে- গায় কথা মাখতো না।

বুক ভেঙে তার কান্না পেতো, লুকিয়ে সকল নিতো,
বাপের কি বা পেশার বেলায়- মোড় ঘুরিয়ে দিতো।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক শেষে, পড়তে কলেজ গেলে,
দেহটা তার ভাটার টানে; খদ্দের না মেলে!
চেষ্টা তবু চলতে থাকে, হলেই হলো পুরুষ,
টানতো বুড়ো, হাদা, মাতাল; করতো না যে বুরুশ।
স্নাতকে ফের উঠলে মানিক, চিন্তা পেয়ে বসে,
নাই দেহ আর বেচার মতো; স্বপ্ন কি যায় ধসে!

নগদ জমা মোটা টাকা, তখনও তার কাছে,
গয়নাগাটি কয়েক ভরি; আর দেনাদার আছে।
যোগাড় করে সকল কিছু, ছাড়ে নরকবাস,
ছেলের হাতে দিয়ে বলে- এতেই করিস চাষ।
কাছে না তোর; নিজের নামে, ব্যাংকে রেখে টাকা,
হিসেব কোরে চালিয়ে নিজের- ঘোরাস জীবন চাকা।
কিছু টাকা হাতে ধোরে, রাখে নিজের দায়,
রেল লাইনে সবজি বেচে- দুইবেলা ভাত খায়।

ইনকামে তার হয় না খাবার, মরে বাঁচার আশা,
ভাড়া বাকি পোড়ে যাওয়ায়- ছাড়তে হলো বাসা।
পরীক্ষা শেষ। বন্ধু নিয়ে, ফিরলে ছেলে ঘরে-
মা পেলো না; পায় ইতিহাস, মালিক সে কাজ করে।
নেমকহারাম বলে আরও, বাসা থেকে নামি,
ভাড়া বাকি থাকায় কিছু- দেয়নি নিতে আমি।
লজ্জা, ঘেন্নায় নুইয়ে মাথা, ছেলে ফিরে আসে,
তীব্র জ্বালায় বুকের ব্যথায়- চোখের জলে ভাসে।

প্রেমিকা, বন্ধুরা যখন, জানবে ইতিহাস,
মিশবে না কেউ; থুথু দেবে, রুদ্ধ হবে শ্বাস।
সাথের সখা কয় বুঝিয়ে, আমার কথা শোন,
যা ঘটে যাক লড়ে যা তুই- মারিস না জীবন।
জানি রে তোর বুকের ভেতর, জ্বলছে যে আগুন,
নিভবে না তা, তোকে যদি- দিই ধরে ফাগুন!
ক্ষণ পেরিয়ে চলে এলো, ফল প্রকাশের দিন,
অসাধারণ করেছে সে; মুখ তবু মলিন!

সহপাঠি, প্রিয়া আসে, উইশ করতে তারে,
জীবন খাতা ভাসছে চোখে- সইতে না সে পারে।
মরিনি তাই বসে কী লাভ; চল রে জীবন ছুটি;
পেলে দেখা ছিড়েই নেবো- বেশ্যা নারীর টুটি!
পরীক্ষাতে টিকে গেছে, ভাইভা কেবল বাকি,
আসল কাগজ খুঁজতে গিয়ে- দেখলো সকল ফাঁকি!
পড়লো মনে আসল সবই, আছে সে বাসায়,
ফিরে পাবার আশা নিয়ে- তড়িৎ বেগে ধায়।

বকেয়া সব মিটিয়ে দিয়ে, ঢুকলো ছেলে ঘরে,
চাবি তো নাই ভাঙতে তালা- হাতুড়ি তাই ধরে।
দেরাজ টেনে ফাইল খুলে, কাগজ যত পায়,
ঠিক পাশে তার ডাইরি ছিলো; দৃষ্টি পোড়ে যায়।
ভালোবাসার উপহারে, দেয় তা আলী তাকে,
তাতেই লেখা যা ঘটেছে- জীবন নদীর বাঁকে।

পড়ার পরে ফুঁফিয়ে কাঁদি, বুকে চেপে খাতা,
চোখ মুছে কই, চাইবো ক্ষমা; নুইয়ে নিজের মাথা।
মা কখনো হয় না বেশ্যা; মা তো শুধুই মা-
ফিরে এসো; কাঁদবো তোমার- জড়িয়ে দুই পা!

মন্তব্য করুন: