• ঢাকা

  •  রোববার, মে ১৯, ২০২৪

জেলার খবর

মাধবপুরের ফিল্টার তৈরির কারিগরদের সুদিন নেই

জালাল উদ্দিন লস্কর, মাধবপুর সংবাদদাতা

 আপডেট: ১২:২২, ৪ জুন ২০২২

মাধবপুরের ফিল্টার তৈরির কারিগরদের সুদিন নেই

ছবি: সময়বিডি.কম

মাধবপুর (হবিগঞ্জ): একসময় মাধবপুরের স্থানীয় কারিগরদের তৈরি পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার সারাদেশে নামডাক ও ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কালের পরিক্রমায় নতুন প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিতে না পেরে জৌলুস হারিয়ে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে এই শিল্প।

একটা সময় ছিল, যখন মাধবপুর থেকে সারাদেশে ট্রাকভর্তি ফিল্টারের চালান পাঠানো হতো। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা অগ্রিম চাহিদা জানিয়ে নির্ধারিত সময়ে নিজেরা এসে ফিল্টার ডেলিভারি নিতেন। জনসাধারণের মাঝে মাধবপুরের ফিল্টারের ব্যাপক চাহিদাও ছিল। 

ফিল্টারের জন্য দেশব্যাপী মাধবপুর একটি বিখ্যাত নাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮০-৯০-এর দশকে। স্থানীয় কারিগররা রাতদিন কাজ করে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সিমেন্ট বালি আর মোজাইকের মিশ্রণ দিয়ে ৩/৪ স্থর বিশিষ্ট ফিল্টার বানাতে গিয়ে দম ফেলার ফুসরত পেতেন না। সময়ের পরিবর্তনে নতুন প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে কঠিন প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে অধিকাংশ কারিগর পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ কেউ এখনো পৈত্রিক পেশাকে ভালোবেসে কষ্টেসৃষ্টে টিকে আছেন ফিল্টার তৈরির কাজে।

বর্তমানে শুধু সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় এবং ফরিদপুর জেলায় মাধবপুরের ফিল্টারের চাহিদা রয়েছে। ফিল্টার তৈরির কারিগর মাধবপুর কাছাড়িপাড়ার পপি ওয়াটার ফিল্টারের লিটন বিশ্বাস জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এবং বাজারে মনোলোভা ডিজাইনের নিত্যনতুন দেশি-বিদেশি মডেলের ফিল্টার সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ এখন আর সিমেন্ট বালি ও মোজাইকের তৈরি সেকেলে ধরণের ফিল্টার কিনতে আগ্রহ দেখায় না। 

অতিথি ওয়াটার ফিল্টার কারখানার মালিক খোকন মালাকার জানান, ফিল্টার তৈরির মুল কাঁচামাল চুনাপাথর, কুচিপাথর, সিমেন্ট, বালি, মোজাইক, সকেট ও ট্যাপ কলের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। বাজারে আকৃতিভেদে একটি ফিল্টারের দাম ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। একই আকৃতির প্লাস্টিকের ফিল্টার কমবেশি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায় পাওয়া যায়। এ কারণে মাধবপুরের ঐতিহ্যবাহী ফিল্টার বাজার হারাচ্ছে।

বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিকের ফিল্টারের পানি অল্প সময় পরেই গরম হতে শুরু করে কিন্তু তাদের তৈরি ফিল্টারে পানি প্রাকৃতিকভাবে দীর্ঘসময় ঠান্ডা থাকে বলেও জানান তিনি।

তার মতে, চাহিদা কমে যাওয়ার পরও দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতে এখনো আমাদের তৈরি ফিল্টারের কিছু চাহিদা থাকায় আমরা লাভ কম জেনেও ব্যবসায়িক সম্পর্কের খাতিরে এবং পৈত্রিক পেশার প্রতি মমত্ববোধ থেকে কিছুকিছু ফিল্টার তৈরি করে সরবরাহ করি। তবে এখন ফিল্টার তৈরি আমাদের মূল পেশা নয়। কেন না; শুধু ফিল্টার তৈরির আয় দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই দুর্মূল্যের বাজারে কোনোভাবেই টিকে থাকা সম্ভব নয়।

একই কথা জানালেন লিটন বিশ্বাস। তিনি জানান, বর্তমানে মাধবপুর পৌরসভার কাছারি এলাকায় ১৭টির মতো ফিল্টার কারখানায় ২০০ শ্রমিক ফিল্টার উৎপাদনের কাজ করছেন। কারখানা ভেদে ৭০/৮০টি থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফিল্টার প্রতিমাসে তৈরি করা হয়। কিন্তু উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তেমন লাভ না থাকায় ফিল্টার কারিগররা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

লিটন বিশ্বাস ও খোকন মালাকারের মতো আরো কয়েকজন কারিগরের সাথে কথা বলে একইরকম চিত্র পাওয়া গেছে। তারা মাধবপুরের ঐতিহ্যবাহী ফিল্টার কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে প্রনোদনা দেয়ার দাবী জানিয়েছেন। 

জুন ৪, ২০২২

জালাল/এবি/

মন্তব্য করুন: