• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

অপরাধ

ডাবের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে বন্ধুরা

অনলাইন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ১১:২৬, ৭ জুন ২০২৩

ডাবের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে বন্ধুরা

প্রতীকী ছবি

গাজীপুর: গাজীপুরে শ্রীপুরে ডাবের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেছে তার বন্ধুরা। সোমবার (৫ জুন) ওই ছাত্রীকে কৌশলে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কলেজছাত্রীর বাবা শ্রীপুর মডেল থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

থানায় করা অভিযোগ ও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক তরুণ ও তার তিন সহযোগী গতকাল বিকেলে ওই কিশোরীকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। এরপর ওই ছাত্রীর শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় তুলে দিয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত তরুণেরা।

১৭ বছর বয়সি একই কলেজছাত্রীর স্বজনরা জানায়, কলেজে পরীক্ষা শেষে পরিচিত এক বন্ধু ডাব খাওয়ার জন্য ডাকে এক কলেজছাত্রীকে। কলেজ থেকে একটু সামনেই একটি দোকান থেকে ছেলে বন্ধুটি একটি ডাব কিনে ওই ছাত্রীকে খেতে দেয়। এ সময় আরো কয়েক বন্ধু ডাব খায় একসঙ্গে। কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রী অসুস্থ অনুভব করে এবং একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নির্জন স্থানে নেওয়া হয়।

ওই সময় কৌশলে আরো কয়েক বন্ধু তাকে সহযোগিতা করে কলেজছাত্রীকে তুলে নিতে। পরে ওই ছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়। 

অভিযুক্ত বন্ধুর নাম ফারদীন হাসান স্বাধীন (২০)। তিনি পৌরসভার ৩নং ওর্য়াডের লোহাগাছ গ্রামের বাসিন্দা সুলতান উদ্দীনের ছেলে।

ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী মিজানুর রহমান খান ডিগ্রি মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি গাজীপুর সদরের শিরিরচালা এলাকায়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বাধীন-সহ তার সহযোগীরা পলাতক।

জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখার চালা গ্রামের কুটুমবাড়ি এলাকার একটি পরিত্যক্ত মাটির ঘরে এ ঘটনা ঘটে। পরে পরিবার খবর পেয়ে হায়াতখার চালা এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে অসুস্থ ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীর স্বজনরা আরো জানান, গত সোমবার সকাল দশটায় টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় ওই ছাত্রী। কদিন ধরেই কলেজে পরীক্ষা চলছিল। প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে বিকালের মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসে সে। কিন্তু ওইদিন বেশি দেরি হওয়ায় তার মোবাইল ফোনে বাব বার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে কলেজে খোঁজ নিলে কতৃর্পক্ষ জানায়, পরীক্ষা শেষে সে বাড়ি ফিরেছে। তখন সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে বিভিন্ন স্থানে।

এ সময় তার ফোন (ছাত্রীর) রিসিভ করে এক ছেলে জানায় (আমাদের মেয়ে) অজ্ঞান অবস্থায় হায়াতখারচালা গ্রামের কুটুম বাড়ি এলাকায় পড়ে ছিল। পরে আহত অবস্থায় তারা একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়েছে। এরপর সিএনজিচালক ফোনে জানালে আমরা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় সিএনজি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

তারা আরো জানান, অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

ওই ছাত্রীর রাতে জ্ঞান ফিরলে সে স্বজনদের জানিয়েছে, কুটুমবাড়ি এলাকায় পরিত্যক্ত একটি মাটির ঘরে আটকে কয়েকজন মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। কলেজ থেকে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় ওই বন্ধু ডাবের পানিতে কৌশলে চেতনানাশক কিছু মিশিয়ে তাকে খেতে দিয়েছে। এক সময় সে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর আর কিছু তার মনে নেই।

শ্রীপুর মিজানুর রহমান খান মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শেখ নাজমা আক্তার জানিয়েছেন, আমাদের কলেজে ক্লাস পরীক্ষা চলছে। সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে কলেজ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বিষয়টি ওই ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের জানিয়েছে। কলেজ ছুটি হয়ে গেলে আমরা সাধারণত ছাত্রীদের তেমন খোঁজ রাখি না।

আইনের আশ্রয় নিতে প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের (কলেজের) পক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা থানায় এসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।

গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আজমীর হোসেন জানান, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিয়েছি। অভিযোগে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখানে স্বাধীন জয় নামে ওই ছাত্রীর বন্ধুকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসামিরা গ্রেপ্তার হবে বলে আশা করছি।

জুন ৭, ২০২৩

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: