• ঢাকা

  •  শনিবার, মে ২৪, ২০২৫

ভিনদেশ

আরব দেশে বাড়ছে যৌন শক্তি-বর্ধক ওষুধের চাহিদা

নিউজ ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৪ জুলাই ২০২২

আরব দেশে বাড়ছে যৌন শক্তি-বর্ধক ওষুধের চাহিদা

প্রতীকী ছবি

আরব বিশ্বে যৌন শক্তিবর্ধক তথা কামোদ্দীপক এবং ধ্বজভঙ্গের ওষুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আগেকার সময়ে যৌন শক্তির কবিরাজি বা হারবাল ওষুধের চাহিদ তুঙ্গে থাকলেও হালে ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে নীল বড়ির (নীল ট্যাবলেট) দিকে। এই জাতীয় ওষুধের চাহিদা এতোটাই বেড়েছে যে এর বর্তমান বাজার কয়েক হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি মিশরের রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রস্থলের ঐতিহাসিক এলাকা বাব আল-শারিয়ায় নিজের কবিরাজি দোকানে কবিরাজ রাবি আল-হাবাশি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে দেখাচ্ছিলেন তার তৈরি কামোদ্দীপক ও প্রাকৃতিক যৌন শক্তি-বর্ধক ‘যাদুকরী মিশ্রণ’।

কায়রোতে কামোদ্দীপক ওষুধ এবং প্রাকৃতিক যৌন শক্তি-বর্ধক বিক্রির জন্য তার বেশ নাম রযেছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে তিনি তার ক্রেতাদের চাহিদায় একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন। তার মতে, এখন বেশিরভাগ পুরুষ নীল বড়ি কিনতে চায়, যেটা তারা পশ্চিমা দেশের কোম্পানিগুলো থেকে পেয়ে থাকে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আরব তরুণরা এখন আরো বেশি বেশি সিলডানাফিল (ভায়াগ্রা নামে পরিচিত), ভারডেনাফিল (লেভিট্রা, স্ট্যাক্সিন নামে পরিচিত) এবং টাডালাফিলের (সিয়ালিস নামে পরিচিত) মতো ওষুধ ব্যবহার করছেন।

২০১২ সালের এক গবেষণায় যেটা বলা হচ্ছে, আরববিশ্বে কামোদ্দীপক এবং ধ্বজভঙ্গের ওষুধের মাথাপিছু ব্যবহারের দিক থেকে মিশরের অবস্থান দু’নম্বরে। সবার শীর্ষে আছে সৌদি আরব।

এই গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে সৌদি সংবাদপত্র আল-রিয়াদ জানিয়েছিল, সৌদিরা তখন যৌন শক্তি-বর্ধক ওষুধের পেছনে বছরে খরচ করতো দেড়শো কোটি ডলার। সৌদি আরবে তখন এরকম ওষুধের ব্যবহার ছিল রাশিয়ার তুলনায় দশগুণ বেশি। অথচ রাশিয়ার জনসংখ্যা সৌদি আরবের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি।

অতি সম্প্রতি আরব জার্নাল অব ইউরোলজি‌’র এক গবেষণার ফলে দেখা যাচ্ছে, ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা তরুণ সৌদি পুরুষ তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে ভায়াগ্রার মতো ওষুধ ব্যবহার করেছেন।

মিশরের অবস্থান এখনো প্রথম। ২০২১ সালের সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেখানে বছরে পুরুষত্বহীনতার ওষুধ বিক্রি হয় ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। এটি মিশরের পুরো ওষুধের বাজারের ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

মিশরের মুদি দোকানে ২০১৪ সালে ‘আল-ফানকুশ‌’ নামের একটি যৌন শক্তি-বর্ধক ওষুধ চকোলেট বার হিসেবে বিক্রি হচ্ছিল। আল-ফানকুশের দাম ছিল এক মিশরীয় পাউন্ড (পাঁচ সেন্ট)। তবে বাজারে আসার কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল যে আল-ফানকুশ শিশুদের কাছেও বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী এই কোম্পানির মালিককে গ্রেপ্তার করে। ফলে আল-ফানকুশের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

পুরুষত্বহীনতার ওষুধ তরুণদের চেয়ে বয়স্ক পুরুষদের কাছে বেশি বিক্রির কথা থাকলেও ইয়েমেনের অবস্থা ভিন্ন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সেখানে এ ধরণের ওষুধ মূলত ব্যবহার করে ২৫ হতে ৪৫ বছর বয়সীরা। ইয়েমেনে ২০১৫ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেখানে আনন্দ-ফুর্তি করার পার্টিতে তরুণ পুরুষরা ওষুধ হিসেবে ভায়াগ্রা এবং সিয়ালিসের ব্যবহার শুরু করে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর থেকে ধারণা পাওয়া যায়। ইয়েমেনের এই গৃহযুদ্ধ চলছে হুথি বিদ্রোহী এবং সৌদি সমর্থিত সরকারের মধ্যে।

তিউনিসিয়ার ইউরোলজি এবং রিপ্রোডাক্টিভ সার্জারি’র প্রফেসর মোহাম্মদ সফাক্সি বিবিসি’কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই ওষুধগুলোকে ‘উদ্দীপক’ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেই, কারণ এগুলো মূলত বয়স্কদের মধ্যে যে ধরণের সমস্যা দেখা যায়, তার চিকিৎসার জন্য।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের যৌন বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞের মতে, তরুণ আরবরা যে এ রকম পুরুষত্বহীনতার ওষুধ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে, তার মূলে আছে সেখানকার বিদ্যমান সংস্কৃতি।

মিশরীয়-ব্রিটিশ সাংবাদিক শিরিন আল ফেকি তার আরব বিশ্বের যৌন সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটাডেল: ইন্টিমেট লাইফ ইন এ চেঞ্জিং আরব ওয়ার্ল্ড’ বইয়ে লিখেছেন, ‘এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, তরুণ আরব পুরুষরা আরো বড় যে সমস্যায় ভুগছে, সেটাই এর মূলে।’

শিরিন আল ফেকি বলেন, আরব এবং ইসলামী ঐতিহ্যে মনে করা হয়, ‘পুরুষের চাইতে নারীর যৌন তাড়না অনেক বেশি, অনেক বেশি শক্তিশালী’, অন্যদিকে পুরুষরা মনে করে এর সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য তাদের ‘যৌন পারদর্শিতা বাড়ানো দরকার‍।’

২০১৭ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে যে বড় সমীক্ষা হয়েছিল, সেটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে দেখা গেছে প্রায় সব পুরুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কিভাবে তারা তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাবে সেটা নিয়ে চিন্তিত। এই জরিপে অনেক পুরুষই বলেছিল, একজন পুরুষ হিসেবে তাদের ওপর কী প্রচণ্ড চাপ। অন্যদিকে নারীদের মন্তব্য ছিল, ‘পুরুষরা আর আগের মতো পুরুষ নেই‍।’

অধিকাংশ মানুষের কাছে যৌন চাহিদার জন্য ওষুধের ব্যবহার আরব সমাজে একটি সাম্প্রতিক ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আরব ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, যৌন বল-বর্ধক ওষুধের ব্যবহার বহুকাল থেকেই এখানকার জনসংস্কৃতিরই অংশ।

চতুর্দশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক গবেষক এবং লেখক ইবনে কাইয়িম আল-জাজিয়া তার কয়েক খণ্ডের বই ‘অনন্ত জীবনের পাথেয়‌’তে যৌন কামনা বাড়ানোর ভেষজ ওষুধ কিভাবে তৈরি করতে হবে তার বিস্তারিত প্রস্তুত প্রণালী অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

অটোমান সাম্রাজ্যে এই ধারণার বেশ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম সেলিমের শাসনকাল ছিল ১৫১২ হতে ১৫২০ সাল পর্যন্ত। তার অনুরোধে লেখক আহমেদ বিন সুলেইমান একটি বই লেখেন, যেটির নাম ‘শেখ‌’স রিটার্ন টু ইয়ুথ’, অর্থাৎ শেখের তারুণ্যে প্রত্যাবর্তন। এটি আসলে যৌন রোগের চিকিৎসা এবং নারী-পুরুষের যৌন কামনা বাড়ানোর জন্য নানা ধরণের ভেষজ ওষুধ প্রস্তুত প্রণালীর এক বিশ্বকোষ। সূত্র: বিবিসিবাংলা

জুলাই ৪, ২০২২

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: