• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৭, ২০২৫

জেলার খবর

সরকারি বরাদ্দ থাকার পরেও মেলা আয়োজনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে নাস্তার সহযোগীতা নিয়েছেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা

মোঃ আরিফুল হক

 প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

সরকারি বরাদ্দ থাকার পরেও মেলা আয়োজনে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে নাস্তার সহযোগীতা নিয়েছেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা

ছবি- সংগৃহীত

'দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি;প্রাণীসম্পদে হবে উন্নতি''-এই স্লোগানকে ধারণ করে জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অনুষ্ঠিত প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলা জমে উঠেনি । বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের আয়োজনে হাসপাতাল চত্বরেই প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন করা হয়।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের চত্বরে প্রদর্শনী মেলায় গিয়ে দেখা গেছে,'বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলা জমজমাট হয়নি। যেখানে বিগত বছরগুলোতে প্রদর্শনী মেলা লোকে লোকারণ্য থাকতো, এবছর মেলা প্রাঙ্গণে চেয়ার পেতে অলস সময় কাটিয়েছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলা আয়োজনে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ পায় কর্তৃপক্ষ। এতে পশুপাখি প্রদর্শনীর জন্য মেলায় ৩২ টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। মেলা ঘুরে দেখা গেছে,৩২ টি স্টলের মধ্যে ৪-৫টি স্টল খালি পড়ে আছে। কিছু স্টলে নামে মাত্র পশুপাখি বেধে রাখা হলেও ছিলো না মালিক। প্রদর্শনী মেলায় চোখে পড়েনি দর্শনার্থীদের ভীড়। বরং হাসপাতালের স্টাফদের চেয়ার বসে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারিভাবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পরেও মেলায় অংশগ্রহণকারীেদর জন্য বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে নাস্তার সহযোগীতা নিয়েছেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা। এছাড়াও অভিযোগ আছে,অফিস চলাকালীন সময়ে হাসপাতাল ফেলে ২ থেকে ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রাইভেটে চিকিৎসা সেবা দেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা।

মেলায় চীনা হাঁস নিয়ে আসা উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নাউড়ী গ্রামের হাঁস খামারি আলাল উদ্দিন বলেন,'গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে আমি প্রাণীসম্পদ মেলায় বিভিন্ন পশুপাখি নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার মেলা তেমন জমজমাট হয়নি। এসময় তিনি আরও বলেন,প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবছর খামারিরা লোকসানে আছে। একারণেই হয়তো এবছর মেলা জমজমাট হয়ে উঠেনি।

টাইগার মুরগী নিয়ে প্রদর্শনী মেলায় অংশ নিয়েছেন উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা মুরগীর খামারি শাহাত হোসেন সিফাত। তিনি বলেন,আমি পড়াশোনার পাশাপাশি টাইগার জাতের মুরগীর খামার করেছি। গত তিন বছর ধরে প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছি। এবারও অংশ নিয়েছি। এবছর মেলা মোটামুটি জমেছে,কিন্তু বিগত বছরগুলোর চেয়ে জমজমাট কম হয়েছে।

প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলা পরিদর্শন শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শাখার সভাপতি ও ময়মনসিংহ-৮(ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে হাতপাখার মনোনীত এমপি প্রার্থী মুফতি হাবিবুল্লাহ বলেন,'প্রতি বছরের মতো এবছরও প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকদের কোন ঘাটতি চোখে পড়েনি। তবে এখন যেহেতু ধান কাটার মৌসুম চলছে সেকারণেই হয়তো প্রাণীসম্পদের সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষক শ্রেণির মানুষ মেলায় অংশ নিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলার প্রচারনাতেও ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি। যেকারণে এবার মেলা আগের মতো জমজমাট হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন,' আসলে আমরা একটু সহযোগিতা করেছি। তার কারণ হলো আমাদের কোম্পানির ওষুধ গুলো তারা লিখেন, এজন্যই তাদেরকে একটু সহযোগিতা করছি এই আরকি।

তবে বেশ কয়েকটি কোম্পানির লোকজন বলেন,মেলায় সরকারি বরাদ্দ থাকার পরও আমাদের কাছ থেকে নাস্তা বাবদ অর্থ নেওয়া ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মাহবুবুল আলম বলেন,' আমাদের পক্ষ থেকে আয়োজনে কোন ত্রুটি ছিলো না।তবে শীতকালীন সময় হওয়ায় প্রদর্শনী মেলায় এবছর উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পরও প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলা আয়োজনে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,'এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রদর্শনী মেলা আয়োজন বাবদ কোন কোম্পানির কাছ একটি টাকাও নেওয়া হয়নি। 

এসবিডি/ওবায়দুর রহমান

মন্তব্য করুন: