• ঢাকা

  •  রোববার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

ভিনদেশ

মারিউপোল ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা দিলো পুতিন

নিউজ ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ১৫:১১, ২১ এপ্রিল ২০২২

মারিউপোল ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা দিলো পুতিন

ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোল ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করছে রাশিয়া। ইউক্রেনের এই শহরকে মুক্ত করতে অবশেষে ‘সফল’ হয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সংবাদ সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

এএফপি জানায়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘মারিউপোল ‘সফলভাবে মুক্ত’ করতে পেরে আমি গর্বিত।’ 

ইউক্রেনের এই শহরটিতে একটি ইস্পাত কারখানা রয়েছে। যা ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইস্পাত কারখানা। পুতিন তার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন ওই ইস্পাত কারখানাটি ধ্বংস করার বদলে দখল করে।

মারিয়ুপোল দখল হওয়ার ফলে ২০১৪ সাল থেকে ‘স্বাধীন’ ক্রাইমিয়া যাওয়ার পথ সুগম হলো রুশ বাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের। এই বন্দর শহরটির দখল পেতে প্রায় দু’মাস চেষ্টা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। 

অন্যদিকে দখলে রাখতে বুধবার পর্যন্ত প্রাণপণ লড়েছে ইউক্রেনের সেনারা।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিয়ানা ভেরেসচুক জানান, শহরের বয়স্ক ব্যক্তি, মহিলা এবং শিশুদের উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের বন্দর শহরের দখল নিয়েছে রুশ সেনারা। তাই ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত মারিউপোলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে বিবিসি জানায়, অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরে থাকা ইউক্রেনিয়ান বাহিনীর অধিনায়ক মেজর সেরহিভ ভলিয়ানা এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। এই বার্তাটিবে 'বিশ্বের প্রতি শেষ বার্তা' হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। বার্তায় ইউক্রেনিয়ান বাহিনীর অধিনায়ক বলেছেন, তারা আর মাত্র কয়েকদিন বা কয়েক ঘণ্টা হয়তো টিকে থাকতে পারবেন। তাদের জরুরি সরবরাহ শেষ হয়ে আসছে ও রুশ সেনারা তাদের চারদিকে ঘিরে ফেলছে।

ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণ করার জন্য রুশ বাহিনীর বেঁধে দেয়া শেষ সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আত্মসমর্পণের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। মারিউপোলের ইউক্রেনিয়ান সেনারা এখন আযভস্টাল ইস্পাত কারখানার ভেতর কোণঠাসা হয়ে আছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে এক হাজারের মতো বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মারিউপোলের মেয়র ভাডিম বোইচেংকো জানিয়েছেন, বুধবার ছয় হাজার মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে ৯০টি বাস পাঠাবে ইউক্রেন। তিনি বলেন, প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো শহরে আটকে আছে।

তবে প্রাদেশিক গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো জানিয়েছেন যে প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়ে কম সংখ্যক বাস অবরুদ্ধ বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে এবং খুব বেশি মানুষ সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

মারিউপোল শহরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আযভস্টাল ইস্পাত কারখানাটির আয়তন প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার - যেটি এখন ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের সর্বশেষ ঘাঁটি। এটির পতন ঘটলে পুরো মারিউপোল রুশদের হাতে চলে যাবে।

কী পরিমাণ ইউক্রেনীয় সেনা শহরটিতে আছে, তা পরিষ্কার না হলেও বিবিসিকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় মেজর ভলিয়ানা বলেন, ইস্পাত কারখানায় প্রায় ৫০০ আহত সেনা সদস্যকে সেবা দেয়া হচ্ছে।

কারখানা এলাকার ভেতর মাটির নীচে বহু টানেল এবং ওয়ার্কশপ আছে, ফলে সেখানে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালানোর কিছু সুবিধা আছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী দোনেৎস্ক অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা ইয়ান গাগিন রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা রিয়া নোভোস্তিকে জানিয়েছেন, এই বিশাল ইস্পাত কারখানার নীচে লুকিয়ে আছে কার্যত আরেকটি শহর।

মারিউপোল দখল করতে পারলে রাশিয়া তাদের দখলে থাকা ক্রাইমিয়া অঞ্চলকে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের এলাকাগুলোর সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। এর ফলে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর উপকূলের ৮০ শতাংশই আসলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ইউক্রেন তখন কার্যত বাকী বিশ্ব থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, সমুদ্র পথে তাদের বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।

এটিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাতে পারবেন।

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া এ পর্যন্ত একটি মাত্র বড় শহর, খারসন দখল করতে পেরেছে। মারিউপোল দখল করতে পারলে প্রেসিডেন্ট পুতিন তার দেশের জনগণকে দেখাতে পারবেন যে রাশিয়া যে লক্ষ্য নিয়ে সেখানে গেছে, তা অর্জিত হচ্ছে।

অন্যদিকে আযভ ব্যাটালিয়নকে ধরতে পারলে প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করতে পারবেন যে, ইউক্রেনিয়ান সরকার নাৎসিদের হাতে চলে গেছে, যেরকম একটা ভিত্তিহীন দাবি তিনি অনেকদিন ধরেই করে যাচ্ছেন।

এপ্রিল ২১, ২০২২

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: