• ঢাকা

  •  সোমবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৫

ভিনদেশ

পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সংঘর্ষে নিহত ২৫০

 প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সংঘর্ষে নিহত ২৫০

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে গত শনিবার রাতে সীমান্ত সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআরের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানকার গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, পাক সেনাবাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২০০ জন আফগান তালেবান ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে এবং সংঘর্ষে ২৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের উদ্ধৃতি দিয়ে সে দেশের গণমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, তালেবানরা ৫৮ জন পাকসেনাকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এই সংঘর্ষে ৯ জন আফগান সৈন্য নিহত হয়েছেন।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, পাকিস্তানি বাহিনীর আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সীমান্তের একাধিক পাহাড়ি এলাকায় এই আক্রমণ চালানো হয়েছে।

পাক-আফগান সীমান্তে এই সংঘর্ষের সূচনা কোন দেশ আগে করেছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। জাবিহুল্লাহ বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান আফগানিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সীমান্তের ভেতর একটি বাজারে হামলা চালায়। অন্যদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি অভিযোগ করেন, আফগান বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ইটের জবাব আমরা পাথর দিয়ে দেব।’

স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে সীমান্তরেখা ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অঙ্গুরআড্ডা, বাজওউর, কুররাম, দির ও চিত্রালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেলুচিস্তানের বাহরাম চাহেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এবারের সীমান্ত হামলার সূত্রপাত আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে। বৃহস্পতিবার রাতে আফগান রাজধানী কাবুল ও পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিয়া প্রদেশে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে সে দেশের মাটিতে অবস্থান করা তেহরিক-ই-তালেবানকে (টিটিপি) সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে কাবুল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল। বৃহস্পতিবার রাতের হামলার দায় পাকিস্তান সরকার স্বীকার বা অস্বীকার করেনি। অন্যদিকে আফগানিস্তান অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আফগান বিচ্ছিন্নতাবাদী আইএসের প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। করাচি ও ইসলামাবাদ দিয়ে তাদের এনে সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আফগান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ।

আফগানিস্তানের টোলো নিউজ জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী খুনার প্রদেশে কাবুল কর্তৃপক্ষ ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। ব্রিটিশদের তৈরি করা ডুরান্ড লাইনের একটি অংশ এই প্রদেশ। ডুরান্ড লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। সীমান্তবর্তী এই লাইন নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান প্রায় শতাব্দীকাল ধরেই স্পষ্ট।
এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস চলবে না। ইসলামাবাদ নিজের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আফগান হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের উসকানির শুধু জবাবই দেয়নি, বরং তাদের একাধিক স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে। 

অন্যদিকে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, সীমানা লঙ্ঘন ও বিমান হামলার যথাযথ প্রতিশোধমূলক জবাব দিয়েছে আফগানিস্তান।

কাবুলভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেছেন, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফর পাকিস্তান খুব সুনজরে দেখেনি। সম্ভবত মুত্তাকির এই সফর সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

এদিকে ভারত সফররত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি দিল্লিতে বলেছেন, ‘আমাদের পাকিস্তানের জনগণ বা নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরে কিছু গোষ্ঠী রয়েছে, যারা পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তানের নিজের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার অধিকার আছে এবং সেই কারণেই প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজা নকভি বলেছেন, বেসামরিক জনগণের ওপর আফগান বাহিনীর গুলিবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আফগানিস্তান রক্ত ও আগুনের খেলা খেলছে। এ ঘটনায় দুই দেশের প্রধান সীমান্ত পয়েন্ট উত্তরে তোর্খাম ও দক্ষিণে চামান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দুই পাশে আটকা পড়েছে। 
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা পাকিস্তানি নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। পাকিস্তানের এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, আফগানিস্তানকে পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই হামলা এমন একসময় ঘটেছে, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে রয়েছেন। তালেবান সরকার পুনঃক্ষমতায় ফেরার পর এটাই তার প্রথম দিল্লি সফর। সফরের সময় ভারত ঘোষণা করেছে, চার বছর পর তারা কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় খুলবে।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভি বলেন, আফগানিস্তানও ভারতের মতোই যথাযথ জবাব পাবে, যাতে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের দিকে খারাপ চোখে তাকাতে সাহস না পায়।

সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করা সৌদি আরব বিবৃতিতে দুই দেশকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। কাতারও সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষেরই উচিত সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমকে অগ্রাধিকার দেওয়া। ইরান দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মন্তব্য করুন: