• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

বাংলাদেশ

মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩ এর খসরায় যা আছে

নিউজ ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩ এর খসরায় যা আছে

ঢাকা: মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালার খসড়া করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মোঃ আনিসুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের একটি কমিটি। নীতিমালাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা, ২০২৩’। শিগগিরই খসড়াটি অনুমোদন পেতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

কমিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকাসহ শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ৩০ কিলোমিটার। মহাসড়কে ১২৬সিসি এর কম ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। পাশাপাশি পেছনে আরোহী নিয়ে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না।

খসড়া নীতিমালায় তিনটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে -

১) মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো। 
২) মোটরসাইকেলের নিরাপদ ব্যবহার ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ তৈরি। 
৩) মোটরসাইকেলচালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বে স্পোর্টি ও স্কুটি - এই দুই ধরনের মোটরসাইকেল বেশি চলাচল করে। বাংলাদেশে বিক্রয়, বিপণন ও সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব মোটরসাইকেলই স্পোর্টি শ্রেণির, যা অপেক্ষাকৃত দুর্ঘটনাপ্রবণ। অন্যদিকে স্কুটি মোটরসাইকেল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। এ জন্য নীতিমালায় স্কুটি মোটরসাইকেলের প্রসার এবং স্পোর্টির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্পোর্টি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিসম্পন্ন। এই গতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এসব মোটরসাইকেলের বসার আসন কিছুটা কৌণিকভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, পেছনের দিকটা উঁচু। অন্যদিকে স্কুটি মোটরসাইকেল আরামদায়ক, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও অপেক্ষাকৃত কম গতিসম্পন্ন। এসব মোটরসাইকেলের বসার আসন সাধারণত ভূমির সমান্তরাল হয়। সব মিলিয়ে এগুলো সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দূরের পথে মহাসড়কসহ সর্বত্র মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিপুল প্রাণহানি ঘটছে। এ জন্য মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ঈদ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসব বা পার্বণকালীন সময়ে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে না। যেকোনো সড়কে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোটরসাইকেলের আরোহী হিসেবে নেওয়া যাবে না।

লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি নিষিদ্ধ:
খসড়া নীতিমালায় চালানোর লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তির কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আর নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার আগে ক্রেতার কাছে মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা যাবে না। অর্থাৎ, ক্রেতার হাতে মোটরসাইকেল যাওয়ার আগেই লাইসেন্স নিশ্চিত করতে হবে। মোটরসাইকেলের পরিবেশক, আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও প্রতিনিধিদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে নিবন্ধন করে ক্রেতার কাছে মোটরসাইকেল হস্তান্তরের সময় বিএসটিআই অনুমোদিত মানের দুটি হেলমেট সরবরাহ করতে হবে।

লাইসেন্সধারী ব্যক্তি ছাড়া নিবন্ধন ও মালিকানা বদল করা যাবে না:
খসড়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর জন্যও নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির নামে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন প্রদান ও মালিকানা বদল করা যাবে না।

নিরাপদ সড়কের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও অবশ্যই পালনীয়:
মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা কমাতে উৎপাদনকারী, সংযোজনকারী, আমিদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কিছু দায়দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। যেমন বিক্রির আগে মোটরসাইকেল চালানো ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মোটরসাইকেলের সঙ্গে এর ম্যানুয়াল (নির্দেশিকা) সরবরাহ করতে হবে। নিরাপদ সড়কসংক্রান্ত প্রচারপত্র (হ্যান্ডবিল, লিফলেট, পোস্টার ও স্টিকার) বিতরণ এবং এ–সংক্রান্ত বিষয় গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করবে তারা।

রাইড শেয়ারিংয়ের চালকদের জন্য নির্ধারিত পােশাক:
রাইড শেয়ারিং ও সাধারণ চালককে আলাদা করার লক্ষ্যে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের চালকের জন্য নির্ধারিত পোশাক ও রঙের হেলমেট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ও অ্যান্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম থাকতে হবে:
খসড়া অনুসারে, মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সময় চালককে নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি (চেস্ট গার্ড, নি গার্ড, এলবো গার্ড, গোড়ালিঢাকা জুতা বা কেডস, সম্পূর্ণ আঙুল ঢাকা গ্লাভস, ফুল প্যান্ট ও ফুল শার্ট) ব্যবহার করতে হবে। মহাসড়কে চলাচলের জন্য মোটরসাইকেলে অ্যান্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) থাকতে হবে। এই ব্যবস্থা মোটরসাইকেলের চাকায় লাগাতে হয়। এই ব্যবস্থায় জরুরি প্রয়োজনে চালক মোটরসাইকেল ব্রেক করলে তাৎক্ষণিক থামবে, তবে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হবে না চালকের।

স্পোর্টি নয়, স্কুটিতে জোর:
স্কুটি মোটরসাইকেল অধিক নিরাপদ বলে এটি জনপ্রিয় করতে শুল্ক ছাড়ের কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। এ ধরনের মোটরসাইকেলের উৎপাদন, সংযোজন কিংবা আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ছাড় দেওয়া যায়। অন্যদিকে অনিরাপদ স্পোর্টি মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্কুটি মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুফল উল্লেখ করে প্রচারণা চালানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

বিআরটিএর হিসাবে, ২০১০ সালে দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লাখের মতো। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে লাখখানেক মোটরসাইকেল যুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন উচ্চ হারে বাড়তে থাকে। গত বছর পাঁচ লাখের বেশি নতুন মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসেই মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ৩২ হাজারের বেশি। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখের মতো। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৯৪৫, যা ২০২২ এসে ২ হাজার ৫৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: