• ঢাকা

  •  মঙ্গলবার, অক্টোবর ৮, ২০২৪

ছুটির ফাঁকে

ধ্বংসের পথে সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

সালাউদ্দীন কাজল

 প্রকাশিত: ১৮:১২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ধ্বংসের পথে সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

ছবি: সময়বিডি.কম

কালুপোল গন্ধর্ব রায় রাজার ভিটা সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। রাজার ভিটা খনন করে দুটি স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। খনন কাজ শেষ হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে রাজার ভিটা বিলুপ্তির পথে। বন্ধ রয়েছে জাদুঘরটিও।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা ঐতিহাসিক স্থানটি কয়েক মিনিটে দেখে হতাশা নিয়ে ফিরে যান। একজন নৈশ্যপ্রহরি জাদুঘর ও রাজার ভিটা দেখাশুনা করেন। সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়ানের কালুপোল গ্রামের চিত্রা নদীর পাড়ে গন্ধর্ব রায় রাজার ভিটার অবস্থান। খ্রিষ্টীয় ১৪-১৫ শতকের সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এটা।

২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানে রাজার ভিটা নামক প্রত্নঢিবির সনাক্ত হয়। ২০১৮ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর খনন করে দুটি স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্তু পায়। এরমধ্যে সুলতানি আমলের ইমারতের দেওয়াল, পোড়ামাটির তৈজসপত্র হাড়ি, ঘট, থালা, বাটি, কলস, তৈলপ্রদীপ, প্রদীপদানি, ধূপতি, মটকা, গণনার টোকন, শিল-নোড়া, অলংকৃত ইট, চুড়ি, কড়ি, স্বল্প মূল্যমানের পাথরের গুটিকা, ফলক, বাটখারা, পাথরের পুথি, মৃৎপত্র পাওয়া যায়।

মধ্যযুগের সুলতানি আমলের শহর খলিফাতাবাদ (বাগেরহাট) ও মুহাম্মাদাবাদ (বারবাজার) প্রত্নস্থানে প্রাপ্ত স্থাপত্যিক নিদর্শন ও প্রত্নবস্তুর সাথে রাজার ভিটার সাদৃশ্য রয়েছে। সুলতানি আমলের প্রত্নবস্তুগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

রাজার ভিটার খনন কাজ শেষ হলেও সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির দারপ্রান্তে এটা। দুটি স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষের দেওয়ালের ইটগুলো খুলে যাচ্ছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় মানুষের অবাধ চলাচল ও গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে এটা। কালুপোল রাজার ভিটা আধুনিকায়ন ও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা আসবে।
অল্পসংখ্যাক পর্যটক রাজার ভিটা দেখতে আসলেও হতাশ হয়ে ফিরে যান তারা। সীমানা প্রাচীর, নতুন সড়ক নির্মাণ, পর্যটকদের বসার স্থান, ছাউনি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সব সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন।

গন্ধর্ব রায় রাজা সম্পর্কে ইতিহাস গ্রন্থে তথ্য না থাকলেও স্থানীয়রা এটা রাজার ভিটা নামেই জানেন। চার আউলিয়ার অন্যতম হযরত মালেক উল গাউসের সাথে গন্ধর্ব রায় রাজার যুদ্ধ হয়। হযরত মালেক উল গাউস প্রখ্যাত সাধক হযরত খানজাহান (র.) এর সহচর ও অনুসারী ছিলেন। 

জানা যায়, গন্ধর্ব রায় রাজা খ্রিষ্টীয় ১৪-১৫ শতকের দিকে খানজাহান (র.) এর সমসময়িক কোনো আঞ্চলিক রাজা বা শাসক ছিলেন।

খুলনা শহর থেকে আসা পর্যটক মাহফুজ মামুন বলেন, ইতিহাসসমৃদ্ধ স্থানটি দেখতে এসেছি পরিবার নিয়ে। এখানে পর্যটকদের জন্য সব ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যাক্তি রহমত আলী জানান, জাদুঘরটি উন্মুক্ত করলে আমরা ঘুরে দেখতে পারবো। পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে উঠলে সরকার রাজস্ব পাবে।

চুয়াডাঙ্গার গড়াইটুপি গ্রামের মাজেদুর রহমান বলেন, রাজার ভিটার ইতিহাসটি ধ্বংসের দারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে। খননসহ অন্য কাজগুলো দ্রুত সময়ে শেষ করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাজু বলেন, রাজার ভিটার ইতিহাস আছে। এখানে রাজাদের বসবাস ছিল। তার ইতিহাস খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধন করা গেলে মানুষের মাঝে আগ্রাহ তৈরি হবে। দেশ-বিদেশের মানুষ ইতিহাস জানবে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

এসকে/এবি/

মন্তব্য করুন: