• ঢাকা

  •  মঙ্গলবার, অক্টোবর ৮, ২০২৪

ভিনদেশ

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৪৯২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৪৯২

ছবি : সংগৃহীত

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ ৪৯২ জন নিহত হয়েছেন। ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। 

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় ৩৫ শিশু ও ৫৮ নারীসহ ৪৯২ জন নিহত এবং এক হাজার ৬৪৫ জন আহত হয়েছেন।

হামলার আগে দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে ইসরায়েল। সতর্কতা বার্তা পেয়ে হাজার হাজার লেবানিজ দক্ষিণাঞ্চল ছাড়তে শুরু করে।

একটি রেকর্ডেড বার্তায় বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে দেওয়া সতর্কবাতার কথা উল্লেখ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই সতর্কতা গুরুত্ব সহকারে নিন। এখনই বিপজ্জনক স্থানগুলো থেকে সরে আসুন। আমাদের অভিযান শেষ হলে আপনারা নিরাপদে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন।’ 

লেবাননের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ক্ষুদে বার্তা আসে, 'আপনি যদি হিজবুল্লাহর জন্য অস্ত্র রাখা আছে এমন কোনো ভবনে থাকেন, তাহলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে সরে যান।’

লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারিও জানান, তার কার্যালয়ও এমন একটি রেকর্ড করা বার্তা পেয়েছে যাতে লোকজনকে ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।

সোমবারের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি।

তিনি বলেন, ইসরাইল প্রয়োজনে লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে প্রস্তুত রয়েছে। লেবাননের সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে হটিয়ে দিতে 'প্রয়োজনীয় সবকিছু' করবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। কেউ যাতে হুমকি দেওয়ার সুযোগ না পায় সে ব্যবস্থা করছি। এই মিশন অর্জনে যা যা করা দরকার আমরা তা করব।’

হাগারি বলেন, গত অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে প্রায় ৯ হাজার রকেট ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে শুধু সোমবারই ২৫০টি।

হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, সোমবার ইসরাইলি যুদ্ধবিমান হিজবুল্লাহর ১ হাজার ৬০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার ও স্বল্পপাল্লার রকেট ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় দেড় লাখ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে গাইডেড মিসাইল এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা ইসরায়েলের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে পারে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ অ্যাজেন্সি জানায়, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেইর আল-আবেদ এলাকায় তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এ ঘটনায় ছয়জন আহত হয় বলে হিজবুল্লাহর আল-মানার টেলিভিশনের প্রতিবেদনে জানা যায়।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ বলেন, এর আগে হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালানো হয়। এ কারণে সরকার দেশের বেশিরভাগ স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।

দক্ষিণ লেবানন ও পূর্ব বেকা ভ্যালিতে ইসরায়েলি হামলা বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালগুলোকে অতীব জরুরি এমন ছাড়া সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে বলেছে যাতে হামলায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। 

সিরিয়ার পাশে লেবাননের পূর্ব সীমান্তের উপত্যকার এলাকাগুলোতেও বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। ওই উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি রয়েছে যা ১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরায়েলের হামলা ও দখলের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সহায়তায় তৈরি হয়েছিল। 

ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে দক্ষিণ লেবাননে সংঘাতের মাত্রা বাড়তে থাকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা তাদের টহল বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক মুখপাত্র। গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় এরই মধ্যে সীমান্তের উভয় পাশের বাসিন্দারাও ওই এলাকাগুলো থেকে সরে গিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানের 'পরবর্তী পর্যায়ের' প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহর ঘাঁটিগুলোতে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে।

এদিকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে প্রায় দেড় শতাধিক রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ।

যদিও হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ইসরায়েলের দিকে অর্ধশতাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে। এমনকি সামরিক ঘাঁটিগুলোতেও হামলা চালিয়েছে।

এমন সময় এই ক্রমবর্ধমান হামলা-পাল্টাহামলা থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে, যে সময় গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে ইসরায়েল। তবে হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে হিজবুল্লাহ।

এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন মুখপাত্র জানান, লেবাননে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত নিয়ে প্রশাসন উদ্বিগ্ন। ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে এই উত্তেজনা কমে আসতে পারে।

সবার স্বার্থে দ্রুত ও কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন বলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, উত্তেজনা কমানো ও যুদ্ধ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অনেক দেশ ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয়ের জন্য অন্য সমাধান নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

এর আগে শুক্রবার বৈরুতের উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং এক ডজনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়। পাশাপাশি নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক বেসামরিক লোক নিহত হয়।

গত সপ্তাহে লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় প্রধানত হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত হাজার হাজার যোগাযোগ ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়ে ৩৯ জন নিহত এবং প্রায় তিন হাজার আহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এর জন্য লেবানন ইসরায়েলকে দায়ী করলেও দেশটি এর দায় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।

এসবিডি/এবি

মন্তব্য করুন: