• ঢাকা

  •  রোববার, মে ৫, ২০২৪

বাংলাদেশ

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ৪২৮ ভুল চিহ্নিত করে সংশোধনী

নিউজ ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ০৮:২৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ৪২৮ ভুল চিহ্নিত করে সংশোধনী

ঢাকা: ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২০২৩ সালের পাঠ্যবইয়ে মোট ৪২৮টি ভুল চিহ্নিত করে এসব ভুলের সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষকদের এসব সংশোধনী অনুযায়ী ক্লাসরুমে পাঠদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের প্রায় চার মাস চলে যাওয়ার পর এসব সংশোধনী দেওয়া হলো। 

চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই পাঠ্যবইয়ের নানা ভুল ও ত্রুটি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল এনসিটিবিকে।

দেখা গেছে, চিহ্নিত হওয়া ভুলগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০২টি এবং সপ্তম শ্রেণিতে ২২৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। আর এ দুই শ্রেণির ইংরেজি সংস্করণের (ভার্সন) বিভিন্ন বইয়ে ৮৫টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে।

এ ছাড়া ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশদ আকারে সংশোধনের কাজ চলছে। গত শুক্রবার এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, দুটি শ্রেণিতেই ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল। এর আগে বইটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার কারণে দুটি শ্রেণি থেকেই বইটির অনুসন্ধানী পাঠ প্রত্যাহার করেছিল এনসিটিবি।

সংশোধনে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৭১টি এবং সবচেয়ে কম বাংলা বইয়ে চারটি সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে ৩৬টি, ইংরেজি ৩৫টি, জীবন ও জীবিকা ১৫টি, বিজ্ঞান ৭টি, গণিতে ৫টি, বাংলা ৪টি, শিল্প ও সংস্কৃতি ৫টি, ইসলাম শিক্ষা ৭টি ও হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ে ১৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে।

একইভাবে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৬৫টি, জীবন ও জীবিকা ২৮টি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৪টি, বাংলা ২১টি, ইংরেজি ১১টি, গণিতে ২২টি, বিজ্ঞানে ৪টি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫টি, শিল্প ও সংস্কতি ১৮টি, ইসলাম শিক্ষায় ৯টি, হিন্দু ধর্ম শিক্ষায় ১২টি এবং খ্রিষ্ট ধর্ম শিক্ষায় ৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চলতি বছরের চার মাস চলে যাওয়ায় যেসব বিষয়ে সংশোধন আনা একান্ত প্রয়োজন, তা সংশোধন করা হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে। শিক্ষকরা সংশোধনী দেখে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন। এ ছাড়া ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশদ আকারে সংশোধনের কাজ চলছে।

এবার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১৩টি করে মোট ২৬টি বইয়ে এসব সংশোধনী আনা হয়েছে। এজন্য কাজ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ বছর চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে মোট ১০টি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে মোট বই ১৩টি। গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে।

নতুন সংশোধনীতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের বিষয়ে আলাদা নোট দিয়ে বলা হয়েছে, অনুশীলন বইয়ে যে যে স্থানে অনুসন্ধানী পাঠ অথবা রিসোর্স বই দেখতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা সে সে স্থানে শিক্ষকের সহায়তায় বা উপযুক্ত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে।

ষষ্ঠ ও সপ্তম - দুই শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে বাক্য শেষ না হওয়া, কোথাও একটি লাইন না থাকা, ভুল শব্দ, বানান, বাক্য, ব্যাকরণ ও ক্রম ভুল থাকা, এ ছাড়া কোথাও কোথাও নতুন লাইন যুক্ত করা, এক পৃষ্ঠা থেকে ছক অন্য পৃষ্ঠায় নেওয়া, ছবির ব্যবহার, পুনরাবৃত্তি থাকায় লাইন বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে শব্দ, বানানগত ভুলসহ নানা কারণে মোট ২০২টি পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি ভুলক্রমে বাদ পড়েছিল। তা সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৭১টি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে ৩৬টি, ইংরেজি বইয়ে ৩৫টি, জীবন ও জীবিকা বইয়ে ১৫টি, বিজ্ঞানে সাতটি, গণিতে পাঁচটি, বাংলা বইয়ে চারটি, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে পাঁচটি, ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে সাতটি ও হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ে ১৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে।

একইভাবে সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে মোট ২২৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ের ‘ভালুক’ গল্প নিয়ে। গল্পে দাঁড়ি কাটা নিয়ে বারবার উক্তি থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় গল্পটি। সংশোধনে দাঁড়ির স্থলে ‘চুল’ করে দেওয়া হয়েছে। দাঁড়ি নিয়ে উক্তিগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। বইটির ১৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ১৬ ও ১৭ নম্বর লাইনে ছিল - ‘তুই মোটেও ভালুক না। একটা বোকা হাঁদারাম মানুষ, যার দরকার দাঁড়ি চাছা আর উদ্ভট পশমের কোট খোলা আছে।’

সংশোধনে দেওয়া হয়েছে - ‘তুই মোটেও ভালুক না বরং এমন বোকা মানুষ যার পোশাকের ঠিক নেই, চুলও ছাঁটেনি অনেক দিন।’

১৮ ও ১৯ নম্বর লাইনে ছিল - ‘ভালুকটা একটা গবেট যার দরকার ভালো করে শেভ করা আর সে পরে আছে একটা পশমের কোট।’ এর স্থলে ‘ভালুকটা একটা গবেট, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে পোশাক পাল্টে আসো’ করা হয়েছে। ২০, ২৮ ও ২৯ পৃষ্ঠায় একাধিকবার দাঁড়ি চাঁছা ও শেভ করার কথা উল্লেখ ছিল, যা বাদ দেওয়া হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে থাকা ভুলের মধ্যে দেখা যায়, বিজ্ঞান বইয়ের ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে ‘নাইট্রোজেন গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।’ এর পরিবর্তে হবে ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।’ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের ৮ নম্বর পৃষ্ঠার ১৩ নম্বর লাইনে আছে ‘পরের জন্য খাটায় উৎসাহ পেয়ে গেছে।’ সংশোধনের পর করা হয়েছে ‘মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়ে গেছে।’ ১৩ নম্বর পৃষ্ঠার ২৪ নম্বর লাইনে ‘তত্তোর’ এর স্থলে করা হয়েছে ‘তত্ত্ব’।

এপ্রিল ৩০, ২০২৩

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: