• ঢাকা

  •  বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

অপরাধ

তারিক হোসেন হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত, গ্রেপ্তার ১

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

তারিক হোসেন হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত, গ্রেপ্তার ১

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের বড়ো পুকুর পাড়ার রবিউল ইসলাম ওরফে রবগুল হোসেনের ছেলে তারিক হোসেনকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্রের মতে, হত্যাকারীরা বেশ কিছুদিন আগেই তারিক হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক গত সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে তারিক হোসেনকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলার গয়েশপুর সীমান্তের বিপরীতে ভারতীয় অংশের দুয়াল মাঠের ভূট্টা ক্ষেতে। ওখানে ধারালো হাসুয়া দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় সাতজন। তাছাড়া হত্যার ঘটনায় পরোক্ষভাবে অংশ নেয় আরো ৭-৮ জন। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া সাতজন এবং পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়া ৭-৮ জন সবাই এলাকার চিহ্নিত স্বর্ণ এবং মাদক চোরাকারবারি।

এদিকে গত বুধবার দুপুরে নিহত তারিক হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আতিয়ার রহমান মালিথা ওরফে আতি নামে এজাহারনামীয় এক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত তারিক হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন তার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। 

নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বিজিবি সদস্যরা জীবননগর সীমান্ত এলাকা থেকে ২৮ বোতল ফেনসিডিলসহ গয়েশপুর গ্রামের আনার হোসেনকে আটক করে। পরবর্তীতে ফেনসিডিলসহ আনার হোসেনকে জীবননগর থানায় সোপর্দ করে বিজিবি। আটক আনার হোসেনের সহযোগীদের ধারণা তারিক হোসেনই তথ্য দিয়ে আনারকে বিজিবির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারিক হোসেনের প্রতি আনারের লোকজন চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া দু'টি স্বর্ণ চোরাচালান মামলার সাক্ষী ছিলো তারিক হোসেন। ওই স্বর্ণ চোরাচালান মামলার আসামীরাও তারিক হোসেনের প্রতি চরমভাবে ক্ষুব্ধ। 

সূত্রমতে, মাদক মামলার আসামী আনার হোসেনের সহযোগীরা এবং দু'টি স্বর্ণ চোরাচালান মামলার আসামীরা যৌথভাবে তারিক হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে দুই সপ্তাহ আগে। পরিকল্পনামাফিক সোমবার রাত সাড়ে ১০টার সময় গয়েশপুর গ্রামের মাহম্মদ আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান মালিথা ওরফে আতি (৪২) কৌশলে তারিক হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর গয়েশপুর সীমান্তের ৬৮নং মেইন পিলার এবং ৬নং সাব পিলারের কাছে দোয়াল মাঠের একটি ভূট্টা ক্ষেতের মধ্যে তারিক হোসেনকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা আতিয়ার রহমান মালিথার ৬ সহযোগী তারিক হোসেনকে দেখামাত্র হাসুয়া দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। 

এ সময় তারিক হোসেনের চিৎকারে ওই এলাকায় অবস্থান নেওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তারিক হোসেনকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারিক হোসেনের মৃত্যু হয়। 

মৃত্যুর আগে তারিক হোসেন তার হত্যাকারীদের নাম স্ত্রী জেসমিন খাতুনসহ হাসপাতালে উপস্থিত অনেকের সামনেই বলেছেন।

নিহত তারিক হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই হত্যাকারীরা বিভিন্নভাবে তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। এক পর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সোমবার রাতে তার স্বামীকে হত্যা করে ওই চক্র। তিনি তার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

থানায় মামলা দায়ের:
তারিক হোসেন হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুরে নিহতের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বাদী হয়ে জীবননগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার স্বার্থে নামগুলো গোপন রাখা হয়েছে।

আসামী গ্রেপ্তার:
তারিক হোসেন হত্যা মামলায় জীবননগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের পাশ থেকে এজাহার নামীয় ৪নং আসামী গয়েশপুর গ্রামের মাহম্মদ আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান মালিথা ওরফে আতিকে গ্রেপ্তার করে। তাকে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
 
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুল খালেক জানান, তারিক হোসেন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

ডিসেম্বর ১৬, ২০২২

সালাউদ্দীন কাজল/এবি/

মন্তব্য করুন: