• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

ফিচার

বৈশাখী মেলা সামনে রেখে ব্যস্ত পাখা তৈরির কারিগররা

পাবনা প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৮ এপ্রিল ২০২৩

বৈশাখী মেলা সামনে রেখে ব্যস্ত পাখা তৈরির কারিগররা

তালপাখা তৈরি করছেন একজন কারিগর। চাটমোহরের ছোটগুয়াখড়া গ্রাম থেকে সম্প্রতি ছবিটি তোলা।

পাবনা: প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়ের কন্ঠে “আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি, বাঁশি কই আগের মতো বাজেনা, মন আর তেমন যেন সাজে না, তবে কি ছেলে বেলা অনেক দূরে ফেলে এসেছি”, এ গানটি অনেকে অনেক বার শুনেছেন। শুধু এ গানটিই নয় তালপাখা নিয়ে রচিত এমন অনেক গান, কবিতা আমাদের সাহিত্যে স্থান করে নিলেও আধুনিকতার প্রভাবে সে সাহিত্য এখন ইতিহাসের অংশ হবার উপক্রম হয়েছে। কালের বিবর্তনে তাল পাখার প্রয়োজনীয়তা কমলেও এখনো এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। আসন্ন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ব্যস্ততা বেড়েছে চাটমোহরের পাখাপল্লীর কারিগরদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাল্গুন থেকে ভাদ্র এই সাত মাস আমাদের দেশে অধিক গরম অনুভূত হয়। প্রচণ্ড গরমে স্নিগ্ধ শীতল বাতাসের পরশ দিতে পাবনার চাটমোহরের মহেশপুর, হিয়ালদহ, ছোটগুয়াখরাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের তালপাতার পাখা তৈরির কারিগররা পাখা তৈরি ও বিক্রি করেন। লোডশেডিংয়ের সময় যখন বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ থাকে তখন গরীবের একমাত্র ভরসা এই পাখা।

একসময় চাটমোহরের মহেশপুর গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারের আয়ের উৎস ছিল তালপাতার পাখা তৈরি। গ্রামটি পরিচিতি লাভ করেছিল ‘তালপাখার গ্রাম’ হিসেবে। গরমকালে তালের পাখা বিক্রি করে বাড়তি আয় করতো তারা। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে পাখা তৈরি করতো। বাড়ির বৌঝি, ছেলে মেয়েরা তাদের এ কাজে সহায়তা করতো। 

'জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছি। একসময় এ গ্রামের আট পরিবার তালপাখা তৈরির সাথে যুক্ত থাকলেও এখন দুইটি পরিবার তালপাখা তৈরি ও বিক্রি করেন।'

শীতকালে কেউ রিকশা-ভ্যান চালাতো, কেউ সেলুনে কাজ করতো, কেউ শহরে যেতো কাজের সন্ধানে, কেউবা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করতেন। ঠিক কবে থেকে এ গ্রমে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয় এর সঠিক কোনো তথ্য কেউ দিতে না পারলেও পাখা তৈরির কারিগররা জানান, বংশ পরম্পরায় তারা এ কাজটি করে আসছেন। কালের বিবর্তনে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

হিয়ালদহ গ্রামের তালপাতার পাখা তৈরির কারিগর আবুল কালাম জানান, 'জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছি। একসময় এ গ্রামের আট পরিবার তালপাখা তৈরির সাথে যুক্ত থাকলেও এখন দুইটি পরিবার তালপাখা তৈরি ও বিক্রি করেন।'

একই গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব ও হাসিনা খাতুন প্রায় ৫০ বছর যাবত তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। তারা সময়বিডি.কম-কে জানান, তালগাছের এক একটি পাতা ১০ থেকে ১২ টাকায় কিনতে হয়। একটা গাছের কয়েকটি পাতা কাটতে শ্রমিককে দিতে হয় ১০০ টাকা। এছাড়া পরিবহণ খরচও আছে। তালপাতা বাড়িতে আনার পর রোদে শুকিয়ে আবার ছায়ায় ঠান্ডা করতে হয়। তারপর নির্ধারিত মাপে তালপাতা কাটতে হয়। বাঁশের তৈরি কাঁঠির মধ্যে তালপাতা পরিয়ে গুনা দিয়ে আটকাতে হয়। তারপর সুতা দিয়ে সেলাই করতে হয়। সবশেষে রং দিয়ে ইচ্ছামত ফুল, পাখি, গাছপালার ছাপ দেওয়া হয় তাল পাখায়। বর্তমান প্রতিটি তালপাখা পাইকারী ১০ থেকে ১২ টাকা করে বিক্রি করছেন তারা।

এলাকার পাখা ব্যবসায়ীরা গঙ্গা স্নানোৎসব ও বৈশাখী মেলায় বেশি পাখা বিক্রি করেন। পাইকাররা পাখা কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। সামনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা হবে। তাই এসময়ে তালপাখা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে।

এলাকাবাসী জানান, চাটমোহরের মহেশপুর, হিয়ালদহ, ছোটগুয়াখরাসহ বেশ কিছু গ্রামে অসচ্ছল পরিবারের সদস্যরা পাখা তৈরির কাজ করতেন। একসময় অনেকে এ পেশাটির সাথে যুক্ত থাকলেও ক্রমশই সে সংখ্যা কমে আসছে। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারা এ পেশায় এখনো কোন রকমে টিকে আছেন কালের বিবর্তনে তারাও হয়তো এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হবেন।

এপ্রিল ৮, ২০২৩

ইকবাল কবীর রনজু/এবি/

মন্তব্য করুন: