• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

জেলার খবর

নান্দাইলে ঐতিহ্যবাহী ‘হাইত উৎসবে’ মাছ ধরার হিড়িক

শাহ্ আলম ভূঁইয়া, বিশেষ প্রতিনিধি

 আপডেট: ২১:০০, ৫ নভেম্বর ২০২৩

নান্দাইলে ঐতিহ্যবাহী ‘হাইত উৎসবে’ মাছ ধরার হিড়িক

দলে দলে হইহুল্লোড় করে ভোর থেকে সৌখিন মাছ শিকারিরা ‘হাইত উৎসবে’ অংশ নেয়। ছবিটি নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমানাঘেষা ঐতিহ্যবাহী বলদা বিলের

নান্দাইল (ময়মনসিংহ): ঢাকঢোল পিটিয়ে বা মাইকে প্রচারণা চালিয়ে নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট বিল অথবা জলাশয়ে অগণিত মানুষ মাছ ধরাকে ‘হাইত উৎসব’ বলে। আধুনিক যুগে প্রচারণায় যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

ময়মনসিংহের নান্দাইলসহ আশপাশ উপজেলার বিভিন্ন বিলে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী হাইত উৎসব। হেমন্তকালে বিশেষত কার্তিক মাসে হাইত উৎসব শুরু হয়। সাধারণত এ সময় বিলঝিলের পানি কমে হাঁটু সমান চলে আসে। হাইতের আয়োজন করে সাধারণত বিলপাড়ের মানুষ। 

নান্দাইলের বলদা বিল, বাপাইল, আড়ালিয়া, হাউয়াইল, বউল্লার, জলা, জালিয়া, দীঘা, টঙ্গী, ভুরভুরি ইত্যাদি বিলে যুগ যুগান্তরের ঐতিহ্য অনুসরণ করে হাইত উৎসব চলে আসছে।

রবিবার (৫ নভেম্বর) নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমানাঘেষা বৃহৎ বলদা বিলে হাইত উৎসব হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কাজল সময়বিডি.কম-কে বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এই উৎসব উপলক্ষে চারদিকে বিলের পাড়ে অবস্থান নেন। কেউ কেউ আগের দিন রাত থেকেই চলে আসেন। তারা নিজ বাড়ি থেকে পিঠাপুলি নিয়ে আসেন। পরে সারারাত ধরে বিলের পাড়ে সবাই মিলে সেগুলো খাওয়া হয়। ভোরের আলো ফুটলেই শত শত মানুষ একত্রে হইহুল্লোড় করে পলো, ঠেলা জাল, খড়াজাল, ডুবা ফাঁদ, চাঁই-সহ বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম নিয়ে বিলে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। ভাগ্য ভাল হলে কেউ বড়সড় মাছ পান। আবার কেউ ফেরেন খালি হাতে। তাতে আনন্দের কমতি হয় না।’

বলদারচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাহেব আলী ভূইয়া বলেন, ‘বলদা বিলে মূলত দুইটি অংশ রয়েছে। একটি বড় বলদা, অন্য অংশ ছোট বলদা। ঐতিহ্যবাহী হাইত উপলক্ষে বিলের চারপাশের প্রতি বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসে। মেহমান আসা উপলক্ষ্যে ভাল মানের খাবারের আয়োজন করা হয়। হাইত উৎসবে যত না মাছ ধরা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় আনন্দ-উল্লাস।’

পাঁচ কিলোমিটার দূরের শেরপুর ইউনিয়ন থেকে আসা নূর মোহাম্মদ (৩৫) জানান, গত শনিবার রাতেই পলো নিয়ে তিনি বলদা বিলপাড়ের দাতারাটিয়া গ্রামে বোনের বাড়িতে এসেছেন। রবিবার অর্ধেক দিন মাছ ধরেছেন। বড় মাছ তেমন না পেলেও ছোট মাছ পেয়েছেন প্রচুর।

তিনি বলেন, আত্মীয় বাড়িতে বেড়ানো হলো, শখ করে মাছও ধরা হলো, এই আনন্দ কম কী? 

চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ধূরুয়া গ্রামের আব্দুল খালেক (৪০) বলেন, অনেক বছর আগ থেকেই বলদা বিলে হাইত উৎসবে মাছ ধরতে আসি। এবারও এলাম। 

ঈশ্বরগঞ্জের কুমারুলী গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪৫) বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, এ কথাটির সাথে আমাদের প্রাণের অস্থিত্ব মিশে আছে। খাল বা নদীগুলোতে সারা বছরই বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার কারণে বিলগুলোতে দিনদিন মাছ কমে যাচ্ছে। ফলে হাইত উৎসবে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।

জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়ন থেকে আসা কাঞ্চন ও স্বপন মিয়া জানান, তারা বড় মাছ ধরেছেন। 

স্থানীয় মুরুব্বিরা জানান, শিশু বয়স থেকে তারা এই উৎসব দেখে আসছেন। তবে এখন খালবিলে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তারপরও ঘোষণা শুনে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন দলবেঁধে ছুটে এসে হইহুল্লোড় চিৎকারের মাধ্যমে মজা করে মাছ ধরে। এটা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, এক অন্য রকম আনন্দ।

নভেম্বর ৫, ২০২৩

মন্তব্য করুন: