• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

বিনোদন

সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার মতো পরিণতি পায়নি বিটুপন-প্রার্থনার প্রেম

অনলাইন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২২ নভেম্বর ২০২২

সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার মতো পরিণতি পায়নি বিটুপন-প্রার্থনার প্রেম

'প্রেম যা দেয়, তারচেয়ে আরো নাকি বেশি কেড়ে নেয়! প্রেম মানুষকে গড়ে, আবার ভাঙেও। সব প্রেমের ফুল ফোঁটার সুযোগ হয় না। পৃথিবীতে এমন অনেক প্রেমের ঘটনা আছে যা মানুষের মনে রেখাপাত করে যায়। সম্প্রতি এমনই দুটি প্রেমের সমাধি হলো।

গত রবিবার মৃত্যু হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাকে আটকে রাখতে পারলেন না প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী। ক্যানসারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। থেকে গেছেন সব্যসাচী।

ঐন্দ্রিলার বাবা-মার মতো সব্যসাচীও শেষ পর্যন্ত প্রেমিকা ঐন্দ্রিলার পাশে ছিলেন। ২৪ বছর বয়সি অভিনেত্রীর মৃত্যুতে সবাই ব্যথিত।

এই আবহেই প্রকাশ্যে এসেছে অন্য এক ভালোবাসার গল্প। সব্যসাচীর মতো প্রেমিকাকে হারিয়েছেন আরো এক প্রেমিক। সেই কাহিনিও কম হৃদয়বিদারক নয়।

ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটির বাসিন্দা বিটুপন তামুলী। দীর্ঘদিন ধরে তার প্রেম প্রার্থনা বোরার সঙ্গে। ২৭ বছর বয়সি বিটুপনের বাড়ি আসামের মরিগাঁওয়ে। আর চাপারমুখের কসুয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রার্থনার বয়স হয়েছিল ২৫।

সম্প্রতি প্রার্থনাকে হারিয়েছেন বিটুপন। তাকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন প্রার্থনা। জানা যায়, প্রার্থনা বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে আসামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অনেকদিন ধরেই প্রার্থনার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসকদের কথা শুনে মেয়ের পরিণতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন বাবা-মা। অবগত ছিলেন বিটুপনও। কিন্তু প্রার্থনার বাবা-মার মতোই এক মুহূর্তের জন্যও তার পাশ ছেড়ে যাননি বিটুপন।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর দুইদিন আগে (শুক্রবার) হাসপাতালেই মৃত্যু হয় প্রার্থনার। সব্যসাচীর মতো পরিণতি পায়নি বিটুপনের ভালবাসাও।

কিন্তু প্রার্থনার মৃত্যুর পর গুয়াহাটিবাসী যা দেখলো তাতে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এসেছে অনেকেরই।

প্রার্থনার মৃত্যুর পর তার দেহের সামনে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেন বিটুপন। একটু সামলিয়ে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসেন বিয়ের সরঞ্জাম নিয়ে।

সিঁদুর-মালা হাতে প্রার্থনার দেহের সামনে বসে পড়েন বিটুপন। কান্না থামিয়ে দৃঢ় মুখে প্রার্থনার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন তিনি। এর পর গালে সিঁদুর লাগিয়ে প্রার্থনার গলায় মালাও পরিয়ে দেন। প্রার্থনার হাতে ছুঁইয়ে নিজেও একটা মালা পরে নেন বিটুপন। বিয়ের প্রাথমিক আচার-অনুষ্ঠান শেষ করে স্পষ্ট ভাষায় জোরে জোরে চিৎকার করে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এই জন্মে আমি আর কাউকে বিয়ে করবো না।’

এই কথা শুনে উপস্থিত সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিটুপন-প্রার্থনার এই ভিডিয়ো ইতোমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

দুই পরিবারই জানিয়েছে, বিটুপন-প্রার্থনা দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করতেন। শীঘ্রই বিয়ের পরিকল্পনাও করেছিলেন তারা। 

এ প্রসঙ্গে প্রার্থনার ভাই শোভন বোরা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে প্রার্থনা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওকে গুয়াহাটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। আমাদের সব রকম চেষ্টা করা সত্ত্বেও ওকে বাঁচাতে পারিনি। শুক্রবার রাতে ও মারা যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রার্থনার মৃত্যুর পর বিটুপন জানায়, ও প্রার্থনাকেই বিয়ে করতে চায়। এই কথা শুনে আমরা বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়ি। কারণ ও যেটা বলেছিল, তা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে, কেউ আমার বোনকে এতো গভীরভাবে ভালবাসতে পারে। আমরা ওকে থামানোর কথাও ভাবিনি।’

শোভন জানান, প্রার্থনা মনেপ্রাণে বিটুপনকে বিয়ে করতে চাইতো। বিটুপন তার সেই ইচ্ছা পূরণ করেন। 

একসঙ্গে থাকতে চাইতেন ঐন্দ্রিলা এবং সব্যসাচীও। কিন্তু নিয়তির কারণে আজ তারা দু’জনেই একা। কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ভালবাসার মানুষ না থাকলেও সেই ভালবাসাকে তারা বাঁচিয়ে রাখবেনই!

ঐন্দ্রিলার ক্ষেত্রে প্রার্থনার মতো অবিকল এই ঘটনা না ঘটলেও আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন সব্যসাচী। দেহ চুল্লিতে ঢোকানোর আগে দেখা যায়, ঐন্দ্রিলার কপালে নিজহাতে চন্দন পরিয়ে দিচ্ছেন তার লড়াইয়ের সঙ্গী সব্যসাচী।

সেই ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওয় দেখা গেছে, শায়িত ঐন্দ্রিলার দেহের পাশে ঠায় বসে আছেন সব্যসাচী। তারপর নিজে হাতে প্রিয়জনের কপালে চন্দন পরালেন অভিনেতা। ঐন্দ্রিলার দু’পা ছুঁয়ে চুম্বন করেন সব্যসাচী।

নভেম্বর ২২, ২০২২

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: