• ঢাকা

  •  রোববার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৩

ফিচার

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ‘গ্রামের সন্ধ্যাবাতি’ হারিকেন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ১৫:৩২, ২৪ অক্টোবর ২০২২

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ‘গ্রামের সন্ধ্যাবাতি’ হারিকেন

ছবি: সময়বিডি.কম

চুয়াডাঙ্গা: আমাদের দেশে গ্রামীণ সমাজের প্রতিটি ঘরে এক সময় আলো জ্বালাতে ব্যবহার হতো হারিকেন। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের দু'একটি বাড়িতে হারিকেন পাওয়া গেলেও সেগুলো ব্যবহার না করায় ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন আর কোনো ঘরে কিংবা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হাজার বছরের ঐতিহ্যের বাহন হারিকেন আর চোখে পড়ে না।

অথচ এখন থেকে ২০ বছর আগেও বেশিরভাগ ঘরেই ব্যবহার হতো হারিকেন। আর ২০ বছর পরে এসে সেইরূপ এখন পুরোটাই পরিবর্তিত হয়েছে।

২০ বছর আগেও চিত্রটি ছিল এমন যে, সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে সাঁঝের বেলায় নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সন্ধ্যায় ঘরের আলো জ্বালানো নিয়ে। কালের বিবর্তনে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় সবার ঘর থেকে হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতিটি ঘরের চিত্রটাই পাল্টে গেছে। গ্রামীণ সমাজের সন্ধ্যাবাতি হারিকেন এখন অতীত স্মৃতি হয়ে গেছে।

সমাজ পরিবর্তন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার সেই/ ঐতিহ্যবাহী হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও সৌর বিদ্যুতের নানা ব্যবহারের ফলে হারিকেনের ব্যবহার আজ আর দেখা যায় না। জেলার গ্রামাঞ্চলে এখন হারিকেন যেমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তেমনি বিদ্যুৎ নেই এমন গ্রামও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে হারিকেনের জায়গা দখল করে নিয়েছে সৌর বিদ্যুতের আলো বা চার্জার লাইট।

প্রতি সন্ধ্যায় হারিকেনের চিমনি খুলে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে এবং ছিপি খুলে কেরোসিন তেল ঢেলে আবার ছিপি লাগিয়ে রেশার (সলতে) মধ্যে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে তা নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে ঘরের মেঝেতে জ্বালিয়ে রাখতো। ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা এক ধরনের দেখতে ফিতার মতো মোটা কাপড় সলতে বা রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। আলো কমানো ও বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট একটি গিয়ার ছিল। হাতের সাহায্যে তা ঘুরিয়ে আলো কমানো ও বাড়ানো যেতো। রাতে ঘুমানোর সময় আলো কমিয়ে সারারাত হারিকেন জ্বালিয়ে রাখা হতো।

তখন কুপি ছিল কয়েক প্রকার। একনলা, দুইনলা, একতাক, দুই তাকের, পিতল ও সিলভারের। তবে সিলভার, টিন এবং মাটির তৈরি বাতির ব্যবহার ছিল খুব বেশি। বাতির নলে আগুন জ্বালানোর জন্য ফিতা বা রেশা হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো কিংবা পাটের সুতলি। চিকন আর লম্বা করে ৫-৬ ইঞ্চির দৈর্ঘ্যরে ওই ফিতা বা রেশা বাতির নল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতো। প্রতিদিন এর কিছু অংশ জ্বলে পুড়ে যেত। ফের পরের দিন আবার একটু উপরের দিকে তুলে দিতো। এক পর্যায়ে তা পুড়ে গেলে আবার নতুন করে লাগানো হতো। এটা ছিল নারীদের সন্ধ্যাবেলার দৈনন্দিন কাজের বিশেষ একটি অংশ।

এই বাতি দিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতো। এ ছাড়াও রাতের সকল কাজ, যেমন রান্নাবান্না, কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প, ধান মাড়ানোসহ সব হতো এই আলো দিয়ে। এখন আর চোখে পড়ে না হারিকেন ও বাতির কথা।

যারা শহর এলাকায় বাস করছেন বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তো এখনো চোখে দেখেনি হারিকেন ও বাতির কথা। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন কালের আবর্তে ডিজিটাল যুগে এই হারিকেন নামীয় বস্তুটি কোনো একসময়ে স্মৃতি যাদুঘরে দেখা যাচ্ছে অতীত স্মৃতি হয়ে।

অক্টোবর ২৪, ২০২২

সালাউদ্দীন কাজল/এবি/

মন্তব্য করুন: