কোমরের মাপের দিকে নজর রাখতে হবে যেসব কারণে
 
																		সুস্থ থাকার জন্য নিজের কোমরের ওপর নজর রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শরীরের মাঝামাঝি এই জায়গায় অতিরিক্ত পরিমাণে বিপদজনক চর্বি জমা হলে সেটা নানা ধরনের স্বাস্থ্য-ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এজন্য নিয়মিত কোমরের মাপ নেওয়ার জন্য লোকজনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কোমর কতটুকু চওড়া হবে?:
চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য-ঝুঁকি কমাতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের কোমরের মাপ তার উচ্চতার অর্ধেকেরও কম থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি ১৭৫ সে.মি. বা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা হন তাহলে আপনার কোমরের মাপ ৮৭.৫ সে.মি. কিম্বা ৩৪ ইঞ্চির কম হতে হবে।
ইংল্যান্ডে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার একসিলেন্স (নাইস) এই পরামর্শ দিয়েছে। নাইস বলছে, দেহের স্থূলতা মাপার জন্য যে বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই পদ্ধতি সেটাও উপকারী কিন্তু পেটের ওখানে ওজন বেড়ে গেলে এই পদ্ধতিতে সেটা ধরা পড়ে না। এর ফলে যারা বিএমআই-এর হিসেবে স্বাস্থ্যবান ক্যাটাগরিতে আছেন তারাও আসলে তাদের কোমরে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি বহন করতে পারেন। শরীরের উচ্চতা আর ওজন হিসেব করে এই বিএমআই পরিমাপ করা হয়।
বিবিসি বাংলাকে ঢাকার ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার জানান, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য কোমরের আদর্শ মাপ হচ্ছে ৩৫ ইঞ্চি কিম্বা ৮৮ সে.মি, আর পুরুষদের কোমরের জন্য এই মাপ ৪০ ইঞ্চি কিম্বা ১০১ সে.মি। তিনি বলেন, 'এর চেয়ে বেশি হলে সেটা বিপদজনক। কোমর এর চেয়ে চওড়া হলে টাইপ টু ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি হতে পারে।'
'মেয়েদের ক্ষেত্রে নাভির দুই ইঞ্চি উপরে এবং এবং ছেলেদের নাভি বরাবর কোমরের মাপ নিতে হবে', বলেন তিনি।
পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার আরো একটি হিসেবের কথা বলেন, যা দিয়ে একজন ব্যক্তির ওজন বিপদসীমার উপরে চলে গেছে কি-না সেটা পরিমাপ করা যায়। কোমর ও হিপের অনুপাত করে এই হিসাব করা হয়। এজন্য কোমরের মাপকে হিপের মাপ দিয়ে ভাগ করা হয়। এই মাপের ফল যদি ০.৭ থেকে ০.৮ হয় তাহলে সেটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু এর চেয়ে বেড়ে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে আরেক পর্যায়ে কোমরের মাপ বেড়ে যেতে পারে। এর সাথে খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি জড়িত। আমরা যেভাবে বসে কাজ করি তার ফলেও তলপেটে চর্বি জমে যেতে পারে। এজন্য তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বসে না থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কোমরে দু'ধরনের চর্বি থাকে। এক ধরনের চর্বি ভেতরে বসে থাকে এবং ভেতর থেকে সে বাইরের দিকে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে বাইরে থেকে সেই চর্বি দেখা যায়। এই চর্বিকে সামাল দেওয়ার জন্য আরেক ধরনের চর্বি এসে তলপেটে জমা হয়। স্যাচুরেটেটেড ফ্যাট বেশি খাওয়ার পাশাপাশি ঠিক মতো ঘুম না হলেও কোমরে চর্বি জমতে পারে।
এই পুষ্টিবিদ জানান, 'এ ছাড়াও বয়স যখন ৪০ এর বেশি হয়, ছেলে বা মেয়ে, তখন তলপেটে ধীরে ধীরে চর্বি জমে যেতে থাকে। এর ফলে দেহের আকার বদলে যায়। উপরের অংশ চিকন এবং নিচের অংশ চওড়া হয়ে যায়। তখন অগ্নাশয় ও আথ্রাইটিসের, মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দেয়'।
সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, বাংলাদেশেও এখন এই সমস্যা বাড়ছে। এধরনের সমস্যা নিয়ে প্রচুর মানুষ তাদের কাছে আসছে। অনেকেই আছে সারা দেহে হয়তো তেমন ফ্যাট সেল নেই, কিন্তু শুধু পেটটা কমানোর জন্যই তারা আমাদের কাছে আসছেন। কোনো নারীর ওজন হয়তো বেশি না কিন্তু তলপেট বেড়ে গেলে হরমোনের ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দেয়। ব্যাক-পেইন হয়, হাঁটুতে ব্যথা করে, গর্ভধারণে সমস্যা হয়। কোমর চওড়া হয়ে যাওয়ার কারণে পুরুষেরও এই একই ধরনের সমস্যার পাশাপাশি তাদের ইনফার্টিলিটি বেড়ে যাচ্ছে।
তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোমর মাপার এই পদ্ধতি যে সবার জন্য কাজ করে তা নয়। যারা খর্বকায় বা খুব বেশি ছোট অথবা ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ, বয়সের সাথে সাথে যাদের উচ্চতা কমে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ সঠিক চিত্র নাও পাওয়া যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি
এপ্রিল ১৩, ২০২২
এসবিডি/এবি/
 
				 
									 
									 
									 
									
মন্তব্য করুন: